বাংলাদেশের ফুটবলের সবুজে তুর্কোভিচের পা পড়ে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের হয়ে। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হতেই তাকে দলে টেনেছে লিগের রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী।
এএফসি কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের ক্লাব ভালেন্সিয়ার মুখোমুখি হওয়ার কথা আবাহনীর। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তারা।
গত শনিবারই শেখ রাসেলের বিপক্ষে খেলেছেন স্বাধীনতার হয়ে। রোববার সকালে আবাহনীর তাবুতে এসে বিকালে নেমে পড়েছেন প্রথম অনুশীলনে। নতুন স্বপ্ন, রোমাঞ্চের আনাগোনা যেমন ভেতরে কাজ করছে, তেমনি আবাহনীকে টেনে নেওয়ার মহাভারও অনুভব করছেন ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
লিগে আবাহনীর গোলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মূলত তিন জন-দোরিয়েলতন নাসিমেন্তো গোমেজ, দেনিয়েল কলিনদ্রেস ও নাবীব নেওয়াজ জীবন।
দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭টি) দোরিয়েলতন চোটের কারণে নেই আগামী মঙ্গলবার ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে এএফসি কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচে। লিগে ৫ গোল করা কলিনদ্রেস, ৩ গোল করা জীবন আছেন আক্রমণভাগে।
মূলত দোরিয়েলতনের শূন্যতা পূরণের ভার তুর্কোভিচের কাঁধে। ডজনখানেক দেশে খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এই ফরোয়ার্ড আশাবাদী প্রত্যাশা পূরণে। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঠিকই জানালেন স্নায়ুর চাপ অনুভবের কথা।
“আবাহনীর মতো একটি দলের হয়ে খেললে চাপ অনুভব করতেই হবে এবং সেটা অনুভব করা প্রয়োজনও। হয়ত আমি ছোট একটা ক্লাব (স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ) থেকে এসেছি, কিন্তু সেটাও চমৎকার একটা দল।”
সিলেটে অনুশীলনে ব্যস্ত আবাহনী দল। ছবি: মোহাম্মদ জুবায়ের
লিগের প্রথম পর্বে অবশ্য প্রত্যাশিত আলো ছড়াতে পারেনি স্বাধীনতা। যদিও তাদের শুরুটা হয়েছিল বসুন্ধরা কিংসকে ২-১ গোলে হারানোর চমক দিয়ে। ওই ম্যাচে দলটিকে প্রথম এগিয়ে নিয়েছিলেন তুর্কোভিচই। ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা এই ফরোয়ার্ড লিগের প্রথম পর্ব শেষ করেছেন চার গোল করে। নতুন মিশনে অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান তিনি।
“এখানে (বাংলাদেশে) আসার আগে ১২টি দেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। তবে আমি মনে করি, এটা আমার কাছে বিশেষ কিছু নয়। আমার মনে হয়, পরের রাউন্ডে যাওয়ার ভালো সুযোগ আছে আমাদের।”
অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে নতুন সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। সেটা করতে সময়ও লাগে। তুর্কোভিচ পাচ্ছেন মাত্র দুই দিন। তবে লিগে খেলার কারণে আবাহনীর জুয়েল-জীবন-কলিনদ্রেসদের সম্পর্কে জানাশোনা আছে বলে দাবি তার। নতুন সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়েও নিতেও আশাবাদী তিনি।
“ফিটনেসের দিক থেকে আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু নতুন সতীর্থদের সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। অবশ্য ছয় মাস এখানে আছি, স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের হয়ে লিগে খেলেছি, আবাহনীর বিপক্ষেও অনেক ম্যাচ খেলেছি, ফলে আমি তাদের অনেককে জানি।”
“আমার মনে হয় না তাদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা আমার জন্য কঠিন কিছু হবে। আবাহনীর স্টাইল আমি জানি, হাতে কিছুটা সময়ও আছে এবং দলকে সাহায্যও করতে পারব।”
গোলের সুযোগ তৈরি করা সতীর্থের অভাব আবাহনীতে দেখছেন না তুর্কোভিচ। তাই নতুন মিশন জয়ে শুরু করতে দারুণ আশাবাদী তিনি।
“আবাহনী এখানকার বড় দল। তারা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে বরণ করে নিয়েছে। আমার পাশে দারুণ সব খেলোয়াড় আছে, এখন আমাকে শুধু গোল করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালেন্সিয়ার বিপক্ষের এ ম্যাচটি জেতা।”
“আগের দিনই লিগ ম্যাচ ছিল। ওই ম্যাচটি শেষ করেই আমি দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আবাহনী এবং আমি আসছে ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করছি। মালদ্বীপের দল ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে আমরা জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। আশা করি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে এবং আমরা শিগগিরি ভারত সফরে যেতে পারব।”
মালদ্বীপের দল ভালেন্সিয়াকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না তুর্কোভিচ। তাদের বিপক্ষে শতভাগ নিংড়ে দিতে সতীর্থদের প্রতি তাগিদ দিলেন বসনিয়া-হার্জেগোভিনার এই ফরোয়ার্ড।
“পারোকে হারিয়ে তারা এখানে আসছে। তাদের সম্পর্কে সব তথ্য আমাদের আছে। আগের ম্যাচ জিতেই তারা এখানে এসেছে, ফলে কোনো প্রতিপক্ষই সহজ নয়। জিততে হলে আমাদেরকেও শতভাগ বা তারও বেশি দিতে হবে এবং আমি বিশ্বাস করি, দলের সবাই সেটা দিবে।”