এখনও সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি
জানিয়ে সরকার বলছে, নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
যারা সুযোগ পাবেন না। তারা পরের বছর যাবেন।
সর্বশেষ নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২
হাজার ৬০৫ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১ হাজার ৮৮২ জন অর্থাৎ মোট ৫৪ হাজার
৪৮৭ জন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে সংখ্যক হজযাত্রী
নিবন্ধন করে অপেক্ষায় আছেন, তাদের মধ্যে অনেকের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।
“তাই এই বয়সের কারণে অনেকেই
যেতে পারবেন না। ফলে নতুন নিবন্ধন থেকেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
সৌদি
আরবের সরকারি সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি শনিবার জানিয়েছে, এবার ১০ লাখ
মুসলমানকে হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হবে। সাধারণত প্রতিবছর ২৫ লাখ মুসলমান এ সুযোগ
পান।
২৫ লাখ মানুষ হজের সুযোগ পাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সুযোগ
পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন (২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, যদিও করোনা ভাইরাসের
কারণে কেউ যেতে পারেননি)।
সে হিসাব অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন আগের
অর্ধেকেরও কম। আগের অনুপাতে হিসাব করলে এবছর সুযোগ পেতে পারেন ৫০ হাজার ৮৭৯ জন।
হজের দুয়ার খুলছে সৌদি, এবার যেতে পারবেন ১০ লাখ ব্যক্তি
”
দেলোয়ার হোসেন নামে হজে যেতে ইচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তিনি
২০১৮ সালেই নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারিনি।
এর মধ্যে ওমরাহ করে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জানি
না এবছর সিরিয়াল পাব কি না আমার বয়সও ৬৫ বছর হয়নি। টিকা থেকে শুরু করে সব ধরনের
প্রস্তুতি নিয়েছি।”
দেলোয়ার হোসেনের মতোই হজে যেতে নিবন্ধন করা ইমাম হোসেন, সোলায়মানসহ আরও
কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের সবার শঙ্কা সিরিয়াল পাবেন কি না?
ফাইল ছবি
তবে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের অভয় দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের
জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি বলেন, “নিবন্ধন
অটোমেশন ভাবে করা। এখানে কারো কোনো হাত নেই, যার সিরিয়াল আগে তারাই আগে সুযোগ
পাবেন। এই নিবন্ধনের সিরিয়াল থেকেই হজে যাবেন।”
কতজন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবেমাত্র
সৌদি সরকার ঘোষণা দিয়েছে। তারা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তারপর এবিষয়ে চুক্তি
হবে। তারপরই সংখ্যা বলা যাবে।”
এই কর্মকর্তা বলেন, “হজ সংক্রান্ত সব ধরনের
প্রস্তুতি সরকার নিয়ে রেখেছেন। সময় তেমন নেই- এটা মাথায় রেখেই আমাদের
প্রস্তুতি। সংখ্যা নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গেই সব প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।”
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় হজ প্যাকেজের অনুমোদন দেওয়া হয়। যদিও করোনা
ভাইরাসের কারণে সেবছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ-১ এ সর্বমোট খরচ
চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২ এ তিন লাখ ৬০ হাজার ও প্যাকেজ-৩ এ তিন লাখ ১৫
হাজার টাকা।
বেসরকারি প্যাকেজে তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ ঘোষণা করা হয়।
তবে হাব সভাপতি তসলিম বলেন, “সর্বশেষ ঘোষণা থেকেও
এবার খরচ বাড়বে। তবে কত বাড়বে তা বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার মিলে নির্ধারণ করবে।”
এবছর
হজে খরচ বাড়বে ইঙ্গিত প্রতিমন্ত্রীর
সৌদি সরকার হজের দুয়ার খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক
খান এ বছর হজ পালনে খরচ বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন।
শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মিনায়
তিনদিন অবস্থানকালে আগে সবাইকে নিচে ঘুমাতে হতো। মানুষের কষ্টের কথা মাথায় রেখে এ
বছর সৌদি সরকার খাটের ব্যবস্থা করেছে।
“আবার জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিমান ভাড়াও বেড়েছে। এসব
কারণে খরচ বাড়তে পারে।”
বাংলাদেশ থেকে কতজন হজ করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অফিসিয়ালি
কোনো ঘোষণা না এলেও এ বছর হজ হবে। তবে কতজন যেতে পারবে তা জানতে একটু সময় লাগবে।”
২০১৯ সালে করোনাভাইরাস মহামারী হানা দেওয়ার পর বিদেশ থেকে হজে
যেতে কাউকে অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব।
ফলে দুই বছর শুধু সৌদি আরবের ৬০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে সীমিত পরিসরে পালিত হয়
বিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক এই সম্মেলন।
এবার বিদেশিরাও হজে যেতে পারবে বলে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
তবে কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে যেতে হবে, আর স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে।
আরব নিউজ জানিয়েছে, যাদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে, শুধু তারাই এবার হজ পালন করতে পারবে।
তবে অবশ্যই দুই ডোজ কোভিড টিকা নেওয়া থাকতে হবে।