রাশিয়ার চাপে পড়ে অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে নাভালনি সমর্থিত অ্যাপটি সরিয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার পার্লামেন্টের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোট দিয়েছেন রাশিয়ার নাগরিকরা। রাশিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ নির্বাচনে হারবে, এমনটা কেও প্রত্যাশাও করেননি বলে মন্তব্য করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকা।
কিন্তু নির্বাচনকে পুতিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নাগরিকদের অনাস্থার প্রমাণ সংগ্রহের সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন নাভালনী ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মীরা। তাই রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে প্রচারণা চালাতে নতুন অ্যাপ তৈরি করেছিলেন তিনি।
ওই অ্যাপটি অ্যাপ স্টোর থেকে সরাতে অ্যাপল ও গুগলের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিল রাশিয়া কর্তৃপক্ষ। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, নির্বাচনের কয়েক দিন আগেই অ্যাপল ও গুগল কর্মীদের বাসায় নিজস্ব এজেন্ট পাঠিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের প্ল্যাটফর্ম থেকে নাভালনির অ্যাপ মুছে দিতে বলেছিল রাশিয়া কর্তৃপক্ষ।
নাভালনীর রাজনৈতিক দলটিকে চরমপন্থী বলে আখ্যা দিয়েছিল পুতিন প্রশাসন। অ্যাপল ও গুগল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে উভয় প্রতিষ্ঠানের রাশিয়ান কর্মীরা জেলে যাবেন বলেও হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া সরকার।
আপাতঃ কাজ হয়েছিল ভয় দেখানোর ওই কৌশলে। ভোটের কয়েক দিন আগেই নিজ নিজ অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে ফেলে অ্যাপল এবং গুগল। ফলে, নির্বাচনের সময় সাধারণ নাগরিকদের অ্যাপটির কারণে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে এসেছিল বলে জানিয়েছে আর্স টেকনিকা।
“এটি আমাদের সমর্থকদের জন্য একটি আঘাত ছিল”– ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন নাভালনির রাজনৈতিক পরিচালক লিওনিদ ভলকোভ। “তারা আসলে পুতিনকে সাহায্য করেছে।”
নির্বাচনের পরপরই গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি ফিরিয়ে আনলেও, অ্যাপল অ্যাপটি ফিরিয়ে এনেছে কয়েক দিন আগে।
এ প্রসঙ্গে নাভালনিকে পাঠানো এক চিঠিতে অ্যাপল বলেছে, রাশিয়া সরকারের অ্যাপটি মুছে দেওয়ার নির্দেশ ‘বর্তমান রাশিয়ায় আইনের শাষণের বাস্তবিক অবস্থার’ প্রতিফলন ছিল, এবং সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য ছিল তারা।
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে এমন ওয়েবসাইটগুলো হরহামেশাই ব্লক করে দেওয়া হয় রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে। এমন প্রেক্ষাপটে সেন্সরবিহীন তথ্যের সরবরাহকারীতে পরিণত হতে পারে অ্যাপ স্টোরের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো। কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এ কারণেই অ্যাপল ও গুগলের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে চাপে রাখে বলে মন্তব্য করেছে আর্স টেকনিকা।
অ্যাপটি ফিরিয়ে আনার কারণ জানতে চেয়ে আর্স টেকনিকার পাঠানো ইমেইলের এখনও কোনো জবাব দেয়নি অ্যাপল। এর আগে, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের জন্যেও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার রাশিয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাপল। আইফোন নির্মাতা দেশটিতে হার্ডওয়্যার পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসেই।
অন্যদিকে, রাশিয়ায় নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার করেনি অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ান কর্মীদের চাকরিচ্যুত করলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না এবং দেশটিতে অ্যাপলের শিগগিরই ব্যবসায়িক কার্যক্রম নতুন করে চালু করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছে আর্স টেকনিকা।