রায় ঘোষণার তিন বছর হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত তা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নুসরাত হত্যার তিন বছর পূর্তিতে রোববার সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া এলাকায় পারিবারিকভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা অংশ নেবেন বলে মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নোমান জানান।
শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খুনিদের স্বজনরা ফেইসবুকে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষোদগার করে যাচ্ছে। আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি হচ্ছে তাদের ব্যবহৃত ফেসবুক। আমাদের সর্বত্র চরম আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।”
এদিকে নুসরাত হত্যার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তার বাড়িতে চাঞ্চল্য ফেরেনি; চারদিকে কেবল সুনসান নীরবতা। ঘটনার পর দুজন পুলিশ সদস্যকে নুসরাতের বাড়িতে পাহাড়ায় বসানো হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও রয়েছে।
স্বজন বা পরিচিত কেউ বাড়িতে গেলে নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা তার কথা মনে করতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন নুসরাত। ২০১৯ সালের মার্চের শেষ দিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার যৌন নিপীড়নের শিকার হলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৬ এপ্রিল তাকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে একটি ভবনের ছাদে নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করে ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় ওই বছরের ২৪ অক্টোবর নিম্ন আদালতে ১৬ আসামির সকলের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), পৌর কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে সম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
নুসরাতের ভাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বদরুল আলম মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার পর থেকে নুসরাতের বাড়িতে অতিরিক্ত ফোর্স নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। সাইবার হ্যারেসমেন্টের বিষয়ে তারা এখনও কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।
নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে কয়েকটি সংগঠন।
এদিকে রায় ঘোষণার তিন বছর হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রায়ের পর উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। মামলার রায় দ্রুত কার্যকরে ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমি যেন মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি সেই প্রত্যাশা করছি।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছেছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়।
সে অনুসারে এগুলো হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার যাবতীয় নথি ছাপানো শেষ করা হয়। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, “আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনার কারণে সেই বেঞ্চ বাতিল হয়ে গেছে। এরপর আর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটির শুনানি সহসা হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।”
আরও খবর