ক্যাটাগরি

বড় হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২৭ রান। জয়ের জন‍্য দক্ষিণ আফ্রিকার চাই ৭ উইকেট, বাংলাদেশের ৩৮৬ রান।

সেন্ট জর্জেস পার্কে রোববার শেষ বেলায় যেন ফিরে এসেছিল কিংসমিড। সেই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ব‍্যাটিং ধসে শেষ পর্যন্ত ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টও সেই পরিণতির দিকে যাওয়ার যথেষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এখনও কোনো টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের রান ছাড়িয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। পরিস্থিতি যেমন তাতে এই টেস্টে সেই ধারা ভাঙার সম্ভাবনা খুব কম।

২২ বলে ৫ রানে খেলছেন মুমিনুল হক। সোমবার তার সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেবেন মুশফিকুর রহিম, যিনি প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন দৃষ্টিকটুভাবে। লড়াইয়ের মানসিকতা দেখাতে হলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে এই দুই জনকে। 

ডারবানে চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেওয়া কেশভ মহারাজ এরই মধ‍্যে ১৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৮ রানে ১ উইকেট পেয়েছেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মার।

তৃতীয় দিনে দেখা গেছে তিনটি ইনিংস। ৫ উইকেটে ১৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ২১৭ রানে। সুযোগ থাকলেও ফলো অন করায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে তারা ৬ উইকেটে ১৭৬ রানে ঘোষণা করে ইনিংস।

২৩৬ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই হারাতে পারত উইকেট। ইবাদত হোসেনের বলে সারেল এরউইয়ার শট যায় পয়েন্টে। কিন্তু বল দেখেননি মেহেদী হাসান মিরাজ, তিনি ভেবেছিলেন যাচ্ছে পাশ দিয়ে। বল গিয়ে লাগে তার বুকে। হাতছাড়া হয় সুযোগ, যন্ত্রণা নিয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। পরে অবশ‍্য ফিরে বোলিং করেন, উইকেটও পান তিনি।

জীবন পেয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন এরউইয়া। আক্রমণাত্মক ব‍্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেন ডিন এলগার। শুরুর জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ।

চমৎকার এক ডেলিভারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ককে বোল্ড করে ৬০ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারকে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় সফল হননি এলগার। আগের তিন ইনিংসে ফিফটি করা বাঁ হাতি এই ওপেনার এবার করেন ২৬।

আরেকটি দারুণ ডেলিভারিতে কিগান পিটারসেনকে এলবিডব্লিউ করে দেন তাইজুল। ওই আউটের পরই শুরু হয় চা-বিরতি।

তৃতীয় সেশনের শুরুতেই এরউইয়াকে থামান সৈয়দ খালেদ আহমেদ। এই পেসারের বলে শর্ট মিড অনে ধরা পড়েন স্বাগতিক ওপেনার। পরে একই জায়গায় তাইজুলের বলে ধরা পড়েন রায়ান রিকেলটন। তিনি ম‍্যাচে তাইজুলের নবম শিকার।

দেশের বাইরে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ৯ উইকেট পেলেন তাইজুল। অন‍্য দুজন মেহেদী হাসান মিরাজ ও রবিউল ইসলাম। এই দুই জনই নেন জিম্বাবুয়েতে।

তৃতীয় সেশনে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা ছিল ব‍্যাটসম‍্যানদের। এর জন‍্য ঝুঁকি নিতে হচ্ছিল, তাতে উইকেটও পড়ছিল।

মিরাজকে স্লগ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন টেম্বা বাভুমা। পরে অফ স্পিনারের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান ভিয়ান মুল্ডার। সঙ্গে সঙ্গেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন এলগার।

৩০ বলে ৬ চারে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন কাইল ভেরেইনা। 

৪১৩ রানের ভীষণ কঠিন রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় নিদারুণভাবে ব‍্যর্থ পরের তিন ইনিংসে। দ্বিতীয় টেস্টে পেলেন ‘পেয়ার।’ প্রথম ইনিংসে টিকেছিলেন ২ বল, এবার ফিরলেন প্রথম বলেই। মহারাজের বলে স্লিপে ধরা পড়েন তরুণ ওপেনার।

জাভেদ ওমর বেলিমের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে টেস্টে দুই ইনিংসেই শূন‍্য রানে ফিরলেন জয়।

বাঁহাতি স্পিনারের বিশাল টার্ন করা বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শান্ত।

সাবধানী ব‍্যাটিং করছিলেন তামিম, কিন্তু আউট হওয়া ডেলিভারিতে তার করার ছিল সামান‍্যই। হার্মারের স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল আচমকা লাফিয়ে তার ব‍্যাটের সোল্ডারে লেগে জমা পড়ে স্লিপে। সেখানেই শেষ হয় দিনের খেলা।

সময় কোনো সমস‍্যা নয়। এখনও বাকি দুই দিন। কিন্তু সমস‍্যা উইকেট। টপ অর্ডারের তিন ব‍্যাটসম‍্যান ফিরে যাওয়ার পর চতুর্থ দিন পার করায় এখন ভীষণ কঠিন বাংলাদেশের জন্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস:  ৪৫৩

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৩৯/৫) ৭৪.২ ওভারে ২১৭ (মুশফিক ৫১, ইয়াসির ৪৬, মিরাজ ১১, তাইজুল ৫, খালেদ ০*, ইবাদত ০; অলিভিয়ের ১৫-৪-৩৯-২, উইলিয়ামস ১২-২-৫১-০, হার্মার ১০.২-১-৩৯-৩, মহারাজ ২৪-৬-৫৭-২, মুল্ডার ১৩-৭-২৫-৩)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৯.৫ ওভারে ১৭৬/৬ (ডি.)(এলগার ২৬, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৪, বাভুমা , রিকেলটন ১২, ভেরেইনা ৩৯*, মুল্ডার ৬; ইবাদত ৫-০-২৯-০, খালেদ ১০-০-৩৮-১, তাইজুল ১৫-২-৬৭-৩, মিরাজ ৯.৫-৩-৩৪-২)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৯.১ ওভারে ২৭/৩ (তামিম ১৩, জয় ০, শান্ত ৭ মুমিনুল ৫*, মহারাজ ৫-১-১৭-২, হার্মার ৪.১-১-৮-১)।