সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, যানজট নিরসনে কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ শহরকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জের পুলিশ শহর যানজটমুক্ত ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। সেখানে এখন যানজট হয় না।”
রাজধানীর ক্ষেত্রেও তা সম্ভব দাবি করে তিনি বলেন, “এইভাবে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা ‘অমুক করতে হবে, তমুক করতে হবে, এটা করা উচিৎ, ওটা করা উচিৎ’ বলেই চলেছি। কিন্তু করবেটা কে?”
যানজট সামলাতে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব চান মেয়র আতিক
সকালে-বিকালে নগরজুড়ে ‘গাড়ি যেন নড়েই না’
বাড়ছে ছোট গাড়ি, বাড়াচ্ছে যানজট
ঢাকা ইউলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট: সমাধান কী?’ শীর্ষক এই সংলাপে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ছাড়াও নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচকদের মধ্যে কয়েকজনই বলেন, ঢাকায় গণপরিবহনের উপর নজর সংশ্লিষ্টরা দিচ্ছে না, বরং ব্যক্তিগত গাড়ি উৎসাহিত করা হচ্ছে।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “বেইলি রোডে সচিবদের জন্য আবাসন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিব গাড়ি নিয়ে বের হন। তাদের অনেকে এ সময় সড়কের উল্টোদিকে গাড়ি নিয়ে চলেন,এ সময় যানজট তৈরি হয়।
“১১৪ জন সচিব, অতিরিক্ত সচিবদের যদি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাস বা মিনিবাসে করে সচিবালয়ে নিয়ে আসেন, তাহলে ওই ১১৪টি গাড়ি রাস্তায় বের হবে না। আপনারা কি পারবেন ওই কাজটি করাতে?”
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, “গণপরিবহনের অবকাঠামো বানাতে হবে, কোনোভাবেই ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নয়। গণপরিবহনের জোর দিয়ে যদি আমরা আমাদের উন্নয়ন কাজ করি, তাহলে আমাদের সমস্যা এখনও সমাধান করা সম্ভব।”
ঢাকায় অনেক মেগা প্রকল্প করা হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো কোনো কাজে আসছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল রাজধানীর যানজটের জন্য সড়ক দখল করে দোকান বসানো এবং গাড়ি রাখাকে দায়ী করেন। এগুলো বন্ধে পুলিশকে কঠোর হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“অধিকাংশ জায়গায় দেখা যায়, রাস্তা দখল করে দোকান-পাট বসানো হয়েছে। আবার রাস্তার উপরে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। যা ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম কারণ। যারা রাস্তার উপরে গাড়ি রাখবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার পাশাপাশি যানজটও বাড়বে, সেজন্য এখন থেকে পরিকল্পনা করতে হবে।
“এই ১৩ বছরে উন্নতির অনেকগুলো কারণেই ট্রাফিক সিস্টেমটা… ট্রাফিক প্রবলেমটা আমাদের কাছে একটা হেডেক হয়ে গেছে। ট্রাফিক সমস্যা নাই,পৃখিবীতে এমন কোনো জায়গা নাই। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, তা মাথায় নিয়ে সে বিবেচনায় সমাধানের চিন্তা করতে হবে।”
এর আগে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যদি আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকে তাহলে উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে।
সোমবার ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সাড়ে চার হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ হবে। তখন এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়বে। এটা হলে গ্রামের মানুষও অনেকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পড়বে। উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে, ফলে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।”
এই সংলাপে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, যানজট ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. আসাদুর রহমান মোল্লা বক্তব্য রাখেন।
ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠি এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক।