ক্যাটাগরি

পেকুয়ায় ‘মানবপাচার চক্রের’ ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

উপজেলার রাজাখালী এলাকা থেকে রোববার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান
র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান।  

গ্রেপ্তার পাঁচ জন হলেন- ইসমাইল (৩২), তার ভাই শফিউল আলম (৩৭), রিয়াজ খান
রাজু (৪১), হোসেন (৬০) ও ইউনুছ মাঝি (৫৬)। তাদের মধ্যে রাজু ছাড়া অন্যদের বাড়ি চট্টগ্রামের
বাঁশখালী উপজেলায়। 

রাজু নিজেকে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি হিসেবে
পরিচয় দেন। আর হোসেন বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য। ইসমাইল ও শফিউলের
বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মানবপাচার আইনে সাতটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সোমবার র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে অধিনায়ক এমএ
ইউসুফ বলেন, এ চক্রের সদস্যরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করত।

“তাদের মধ্যে ইসমাইল ও শফিউল চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পেকুয়া এলাকায় আর্থিকভাবে
অস্বচ্ছল ও মহামারীতে কাজ হারানো লোকজনকে টার্গেট করে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে রাজুর
সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতেন।

“রাজু বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে অগ্রিম এক লাখ টাকা
সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন। আবেদনকারীদের ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন কাজ রাজুই
সম্পাদন করতেন।”

মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে রাজু প্রতিজনের সঙ্গে ‘দুই লাখ টাকার চুক্তি
করতেন’ জানিয়ে তিনি বলেন, “তার মধ্যে অগ্রিম এক লাখ টাকা নিতেন, আর বাকি টাকা বিদেশে
পৌঁছানোর পর পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করার চুক্তি করতেন। পাঠানোর আগে পাসপোর্ট করে
দেওয়ায় ভুক্তভোগীরা সহজেই তাকে বিশ্বাস করতেন। পরে প্রতারিত হতেন।”

র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ বলেন, “রাজু ১০০ জনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করলে
তার মধ্যে কয়েকজনকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠাতেন। আবার কাউকে কাউকে ট্রলারে করে নিয়ে
সীমান্তবর্তী কোনো জঙ্গলে রেখে আসতেন। আর বাকিদের কয়েকদিন ট্রলারে করে কয়েকদিন সমুদ্রে
ঘুরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে কোনো দ্বীপে রেখে আসতেন।

“ট্রলারে তোলার পর রাজু তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিতেন। তার
কাছ থেকে ৩১টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজু নিজেকে তার এলাকার সরকার দলীয় একটি সংগঠনের
নেতা পরিচয় দিতেন। তার কাছে প্রতারিত লোকজন টাকা দাবি করলে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি
করতেন।

মালয়েশিয়ায় নেওয়ার
কথা বলে সেন্ট মার্টিনে

মালয়েশিয়ায় নেওয়ার কথা বলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রেখে আসার ঘটনায় মো. জায়েদ
নামে এক ভুক্তভোগী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে মালয়েশিয়া
পাঠানোর কথা বলে রাজু তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা আদায় করেছিলেন। পরে মালয়েশিয়া সীমান্তে
কড়াকড়ি আরোপের কথা বলে আরও এক লাখ টাকাসহ মোট দুই লাখ টাকা আদায় করেন।

টাকা দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর পেকুয়ার মঘানামা ঘাট থেকে তাকে একটি নৌকায়
তুলে এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আরেকটি ট্রলারে তোলা হয়, যেখানে আরও কয়েকজন
ছিলেন। পরে তিন দিন সমুদ্রে ঘুরিয়ে এক রাতে মালয়েশিয়া পৌঁছে যাওয়ার কথা বলে সেন্টমার্টিনে
নামিয়ে দেওয়া হয়। সকালে তারা বুঝতে পারেন, রাজু প্রতারণা করেছেন।

জায়েদের দাবি, রাজু নিজেকে তার এলাকায় যুবলীগের সভাপতি পরিচয় দেন। প্রতারিত
লোকজন তার কাছ থেকে টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। তার বিরুদ্ধেও
দুটি মামলা দিয়েছেন।

এদিকে মোজাম্বিকে নিয়ে অপহরণ করে দেশে টাকা আদায়ের অভিযোগে সাবেক ইউপি
সদস্য মো. হোসেনের নামে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা আছে বলে র‌্যাব জানায়।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক ইউসুফ বলেন, মোক্তার আলী নামে এক ব্যক্তি কয়েক বছর আগে
হোসেনের ছেলে এমরানের মাধ্যমে মোজাম্বিকে যান। সেখানে যাওয়ার পর মোক্তারকে অপহরণ করা
হয়।

“এ সময় এমরান মোজাম্বিক থেকে মোক্তারের ভাই জয়নালকে ফোন করে তারা বাবার
(হোসেন) কাছে সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে মোক্তারকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায়।

“এমরানের কথা মত জয়নাল তার বাবার কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার পরও মোক্তারের
কোনো খোঁজ মেলেনি। তবে জানা যায়, মোক্তারকে অপহরণের পরপরই খুন করা হয়েছিল।” 

এ ঘটনায় জয়নাল বাঁশখালী থানায় হোসেন ও তার দুই ছেলের পাশাপাশি আরও চারজনকে
আসামি করে ২০১৭ সালে একটি মামলা করা হয়।