ক্যাটাগরি

‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ঘটনা অশনিসংকেত’

সোমবার
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সঞ্জীব কুমার
ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, “সম্প্রতি টিপকাণ্ড, হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে
ধর্ম অবমাননা এবং নওগাঁর হিজাবকাণ্ড একইসূত্রে গাঁথা। দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র
করছে একটি চক্র।

“ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের
আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

সম্প্রতি
রাজধানীর এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কপালে টিপ পরায় ‘বাজে গালি’ দেওয়ার পর গায়ে মোটরসাইকেলের চাকা তুলে দেওয়ার অভিযোগ
করেন এক শিক্ষক। এর ‘কিছু সত্যতা’ পেয়েছে
 পুলিশের করা তদন্ত কমিটি।

টিপ পরায় হেনস্তা: অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়েছে’ তদন্ত কমিটি
 

টিপ পরায় শিক্ষককে গালি, হেনস্তার অভিযোগ
 

শিক্ষক
সমিতি বলছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও ধর্মীয় উস্কানির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়
প্রশাসনের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যর্থতা ও দায়িত্ব অবহেলায় দেশকে বারবার অস্থিতিশীল
করার সুযোগ পাচ্ছে দোষীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, “এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের
অস্তিত্বের জন্য অশনিসংকেত।”

শিক্ষক
নেতারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান মোবাইলে ধারণ ও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে
সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে শিক্ষককে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা স্বাধীন মতপ্রকাশ
ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে।

গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার
পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দশম শ্রেণিতে
বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।

সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী
রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
করে কিছু লোক। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে
নেয়।

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে চলছে?’
 

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না হওয়ায় প্রশ্ন
 

মুক্তি পেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল
 

ঘটনার
দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়।
২৩ মার্চ তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
রোববার তিনি জামিনে মুক্ত হন।

এই
ঘটনার মধ্যেই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘হিজাব পরায়’ ছাত্রীদের পেটানোর অভিযোগ উঠে সহকারী প্রধান শিক্ষক
আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে।

‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ হচ্ছে, বললেন নওগাঁর শিক্ষক আমোদিনী
 

তবে
ওই শিক্ষক বলেন, স্কুল ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছেন, সেখানে হিজাবের কোনো বিষয় ছিল না।

শিক্ষক
সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রসঙ্গে বলা হয়, “এ সকল বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং ত্বরিত
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দাবি জানাচ্ছে।”

অপর
এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের পরীক্ষায় নকল ধরায় শিক্ষক
তানবীর হাসানকে টেলিফোনে ছাত্রনেতা রাজু মুন্সির হুমকি দেওয়াসহ ক্যাম্পাসের আরও কিছু
ঘটনায় উদ্বেগ জানায় শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক
সংগঠনের নেতারা বলেন, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ
শিক্ষকদের রুমে হামলা, সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্টের কক্ষে হামলা, শিক্ষকদের গাড়ি
আটক, দাবি আদায়ের নামে শিক্ষকদের হয়রানি করা শিক্ষক সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

“চবি শিক্ষক সমিতি প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে
প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি
জোর দাবি জানাচ্ছে।

“…শিক্ষক কখনও ছাত্রের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। ছাত্র-শিক্ষক
ও অন্যান্য পক্ষগুলোর সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল শিক্ষার অনুকূল
পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব।”