গত রোববারের এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুটি এখন মেরামতের আগে আর উড়তে পারবে না। এগুলোর একটি সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ ও আরেকটি বোয়িং ৭৩৭।
ধাক্কার পর দুটো উড়োজাহাজই অকেজো (গ্রাউন্ডেড) হয়ে রয়েছে। মেরামতের পরই এগুলো ফ্লাইট পরিচালনার উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
হ্যাঙ্গারের মধ্যে দুটি উড়োজাহাজের সংঘর্ষের এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
দুর্ঘটনার খবর শুনে সোমবার দুপুরে উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শনে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে যান তিনি। সেখানে এটি নাশকতা বা দুর্ঘটনা কি না তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানিয়েছেন, এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ রাখার স্থান- হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। রোববার দুপুরে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটিও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেখানে নেওয়া হচ্ছিল।
বিমানের ওই হ্যাঙ্গারের ভেতরে ঢোকানোর সময় বোয়িং ৭৩৭ এর সামনের অংশের সঙ্গে ভেতরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনে অংশের ধাক্কা লাগে। এতে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশে থাকা ওয়েদার রাডারটি (র্যাডম) ভেঙে যায়। আর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের পেছনের দিকের ভার্টিকাল স্ট্যাবিলাইজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব যন্ত্র মেরামত বা পুনঃস্থাপন না করে উড়োজাহাজ দুটি ওড়ার জন্য প্রস্তত হতে পারবে না। এজন্য বিমানের পক্ষ থেকে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সাধারণত বিশেষ ধরনের ‘পুশকার্ট’ দিয়ে বিমানবন্দরের মধ্যে বড় বিমানগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। এজন্য বেশ কয়েকজন কর্মী ‘পুশকার্ট’ চালককে সংকেত দিয়ে সহায়তা করেন।
খুবই সতর্কতার সঙ্গে কাজগুলো করা হয়। সেখানে কী করে এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এমন ঘটনাকে খুবই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’
মন্তব্য করে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এভিয়েশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ
টি এম নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি চূড়ান্ত রকম অবহেলার ফলাফল।
“এর আগে বিমানের কর্মীদের অনেক
রকম দুর্নীতি ও অবহেলার চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার কথা তেমন শোনা যায় না। দুর্নীতি-অবহেলার ঘটনায় কয়জনের চাকরি গেছে? যার কারণে
এরকম ঘটনা একটার পর একটা ঘটেই চলেছে।
“এরকম বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সে এরকম
অবহেলা একেবারেই বরদাশত করা যাবে না,” যোগ করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে-পরে
এয়ারলাইন্সগুলো ভালো ব্যবসা করে নেয়। বিদেশ থেকে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি ঈদের আগে
ফেরেন, ঈদের পরে তারা আবার বিদেশে যাবেন। এছাড়া অনেক মানুষ প্রতিবছরই ঈদের সময় বিদেশে
বেড়াতে যান। আবার অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতেও ভালো ব্যবসা হয়।
“এ সময় দু-দুটো এয়ারক্রাফট গ্রাউন্ডেড
হল বিমানের। এই ক্ষতির দায় কে নেবে?”