পিটিআই এর লাল-সবুজ পতাকা হাতে রোববার রাস্তায় নেমে এসে দেশের পরবর্র্তী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে তারা।
ইমরান অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওার আগে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রোববার রাস্তায় নামে তার হাজার হাজার সমর্থক।
ছবি: রয়টার্স
করাচি, পেশোয়ার, মালাকন্দ, মুলতান, খাইবার, কোয়েটা, ইসলামাবাদ, অ্যাবোটাবাদ, লাহোর, সোয়াত, ফয়সালাবাদ, নওশেরা, পাঞ্জাব, গুজরাটসহ আরও বহু নগরীতে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তানের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য এবং আরব আমিরাতেও। ইমরান খানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে লাহোরে পিটিআই সমর্থকরা রোববার রাত ৯ টা থেকে মধ্যরাত ৩ টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে।
পাকিস্তানের সেলিব্রেটিরাও বিক্ষোভ থেকে বাদ যাননি। গত কয়েকদিন ধরেই স্যোশাল মিডিয়ায় ইমরান খানের সমর্থনে সরব ছিলেন সেলিব্রেটিরা। তারা অনাস্থা ভোট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
ছবি: রয়টার্স
এরপর অনাস্থা ভোটে ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা অনলাইনে আরও বেশি সোচ্চার হয়েছেন। অনেকেই পাকিস্তান জিন্দাবাদ! ইমরান খান জিন্দাবাদ! স্লোগান পোস্ট করছেন। পিটিআই এর নামে স্লোগান দিচ্ছেন।
প্রতিবাদে রাস্তায় নামা এক বিক্ষোভকারী বিবিসি কে বলেন, “ইমরান খানই একমাত্র সৎ মানুষ। কেবল তাকেই আমরা বিশ্বাস করতে পারি। আমরা দেশদ্রোহীদের শাসন চাই না।”
ইমরান খান তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার অভিযোগ করেছিলেন। ইউক্রেইন যুদ্ধে মধ্যে ইমরান রাশিয়া সফরে যাওয়ার কারণে পশ্চিমারা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছে এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি।
ছবি: রয়টার্স
তবে বিরোধীদলীয় নেতারা ইমরানের এই যুক্তিকে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, পার্লামেন্টে সমর্থন হারিয়েও ইমরান বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন।
অনেক বিশ্লেষকও মনে করেন, ওয়াশিংটন থেকে আসা একটি সতর্কবার্তাকে ইচ্ছাকৃতভাবেই অতিরঞ্জিত করেছেন ইমরান খান। তবে ইমরানের সমর্থকরা তার কথারই প্রতিধ্বিনি করেছে। বিক্ষোভে অনেকেই স্লোগান দিয়ে বলেছে, “যে আমেরিকার বন্ধু, সে একজন দেশদ্রোহী।”
ছবি: রয়টার্স
ইসলামাবাদের একটি পার্কে বিক্ষোভে নামা এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা দাসের মতো জীবন যাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ইমরানের বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “এই লোকেরা সব চোর, আশা করি তারা সবাই জেলে যাবে।”
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকে। ইমরান খানের সমর্থকরা এতদিন সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে আসলেও এবার তারা ইউ-টার্ন নিয়েছে। স্যোশাল মিডিয়ায় ভিডিওতে সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদেরকে, পাকিস্তানে যে দৃশ্য বিরল।
ছবি: রয়টার্স
২০১৮ সালে ইমরান খান পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসার পেছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। কিন্তু পরে গতবছর সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সুসম্পর্কে ভাঙন ধরে বলেও মনে করা হয়। এই ভাঙনের কারণেই হয়ত সেনাবাহিনী ইমরানকে আর সমর্র্থন দেয়নি।
যদিও, ইমরান খানের দল পিটিআই ছেড়ে যে সদস্যরা চলে গেছেন, তারা সেনাবাহিনীর ভূমিকা ‘নিরপেক্ষই’ বলছেন। তারপরও একটা জিনিস স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনী যদি ইমরান খানের পতনে সরাসরি কিছু করে নাও থাকে, তবু তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে দেখতে চেয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান: অনেক নাটকের পর আস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান