ক্যাটাগরি

ঋণ নয়, বিনিয়োগও দেখেশুনে নেয় বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছেন, শুধু ঋণ নয়, বিনিয়োগও ‘খুব হিসাব করে’ নেয় বাংলাদেশ।

অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নানারকম কথা যারা লিখছে। আমি আবারও বলছি- ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে- এ রকম একটা কথা রটাচ্ছে।”

উন্নয়নের জন্য বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নিচ্ছি, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের একটা হিসাব থাকে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, আমরা কিন্তু ডিফল্টার না।

“আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি. প্রত্যেকটা ঋণ আমরা কিন্তু সময়মতো পরিশোধ করেছি। এমনকি করোনার মাঝেও আমরা কিন্তু ঋণ খেলাপি হইনি।”

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন বলে জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমরা যে উন্নয়নের প্রোগ্রাম নিই ঠিকই আছে, কিন্তু সেটা নেওয়ার সময় আমরা কিন্তু হিসাব রাখি। যে কোথা থেকে কত ঋণ আমরা নিলাম আর সেই ডেভেলপমেন্ট যেটা করছি, সেখান থেকে কতটুকু আমরা লাভবান হবো; এই উন্নয়ন থেকে রিটার্নটা কী, কতটুকু মানুষের কল্যাণে যুক্ত হবে, এই রিটার্নটার ব্যাপারে আমরা কিন্তু সচেতন।

“প্রত্যেকটা পরিকল্পনা নেওয়ার সময় এটাই হিসাব করি, এই কাজটা করলে পরে কতটুকু আমার দেশের মানুষ পাবে, কতটুকু আমার অর্থনীতিতে যোগ হবে, অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী হবে। মানুষের কল্যাণে কতটুকু দিতে পারব, করতে পারব। আমরা সেই চিন্তাটাই করি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই বিনিয়োগটাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে আমার দেশ লাভজনক হবে। একটা বিনিয়োগ আসলো, আর একটা বিশাল বিশাল কিছু তৈরি করে দিয়ে গেল, তো সেটা আমার কোনো কাজে লাগল না। সেখানে আমরা একটু ধীরে চলি।”

বিদেশি বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সতর্কতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “দেশের মানুষের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হবে, সেই চিন্তাটা মাথায় রাখতে হবে। নইলে বিনিয়োগের জন্য যেভাবে সবাই ঝাঁপ দিয়ে আসছে; কিন্তু আমাদের খুব হিসাব করে পা ফেলতে হবে। এটা আমি সবাইকে খুব বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব।”

দেশের জন্য কল্যাণকর নয়- এমন বিনিয়োগ চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে মনে করবে- হ্যাঁ বিনিয়োগ আসছে, আমরা নিচ্ছি না কেন? কিন্তু তার বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, বাংলাদেশের জনগণ কী পাবে, আমরা কতটুকু দেশের কল্যাণে লাগাতে পারব, সেটা চিন্তা করে আমাদের করতে হবে। যেটা আমার দেশের কল্যাণে লাগবে না, সেটা আমরা করব না।

“আমাদের এই হিসাবটা আছে বলেই এটা ওই শ্রীলঙ্কা করা, এটা অতটা সহজ হবে না। তবে যারা করার চেষ্টা করবে, যেটা শ্রীলঙ্কাকেও যেমন করে দিয়েছে, আমাদের ওপরও চাপ আসবে, ওরকম কথা আসবে। আমরা যদি সতর্ক থাকি তাহলে কেউ আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না- এটা আমার বিশ্বাস।’

অপপ্রচারে না ঘাবড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এ রকম তো বারবারই আমরা ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আসছি তো এ জন্য একটু বেশি জিনিসটা বুঝি এবং জানি। আগাম বুঝতে পারি, এখন কোন পক্ষ থেকে ঝড়টা আসতে পারে। তো আগে থেকে আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। আমি এটাই বলবো কে কী বললো, কে কী চিন্তা করলো- ওটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।”

‘প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করুন’

মহামারী আর ইউক্রেইন যুদ্ধের এই সঙ্কটকালে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সারা বিশ্বব্যাপী জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এর ধাক্কাটা তো আমাদের লাগবে। তো আমাদের এখানে কী করা উচিৎ? সেটাও আমি বলব যে, আমার অফিসে যারা কাজ করেন তাদের পক্ষ থেকে এবং যারা বেসরকারি খাত আছে, তাদের সবাইকে আমি বলব- আমাদের কিন্তু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে কথাটি আমি বলেছি যে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।”

বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা মহামারীর শুরুতেই করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই উৎপাদন এইজন্য করতে হবে যে করোনাভাইরাস যখনই দেশে এসেছে, তখন থেকে আমার এই ধারণা ছিল যে সামনে আমাদের খুব খারাপ দিন, পৃথিবীতে খারাপ দিন আসবে। খাবারের অভাবটা ব্যাপক দেখা দিবে, খাদ্য ঘাটতিটা হবে।

“সেই জন্য আমি সবসময় বলছি যে যার যতটুকু জমি, দরকার হলে ছাদ বাগান থেকে শুরু করে, নিজের খাদ্যটা নিজে উৎপাদন করা, অর্থাৎ খাদ্যে যেন আমরা সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি। ওই ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না এসে পড়ে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যা আছে, আমাদের কিছু উৎপাদন করতে হবে। যার পুকুর আছে, মাছ করুক। ধান, তরিতরকারি, নিদেনপক্ষে একটা কাঁচামরিচ গাছ হলেও লাগান। সবাই কিছু কিছু করতে হবে।”

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনা, তারপর হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধ- এই দুটো মিলে তৃতীয় হয়ত আরেকটা ধাক্কা আসবে। যে কারণে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাটা নিজেদের নিতে হবে।

“আমাদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, আমরা বাইরের যে জিনিসের ওপর নির্ভরশীল, যেমন এখন আমরা এলএনজি আমদানি করছি, তার দাম বেড়ে গেছে। আমাদের তেল আমদানি করতে হচ্ছে, তেলের দাম ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে।”

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে যদি আরও সমস্যা হয় তাহলে তার বিকল্প আমরা কী কাজ করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের মানুষের জীবন-জীবিকার পথটা কিভাবে সুগম রাখতে পারি, সেটা আমাদের দেখতে হবে। সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। সেই চিন্তাটা আমাদের এখন থেকে করা দরকার।”

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এ মতবিনিময় সভা। এতে অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সভা সঞ্চালনা করেন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।