ঢাকার উত্তরায় ২৫ দিন আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার
করে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ
কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. মুসলিম (২০), এবং মো. আবু সাফি (২৫)। তাদের কাছ থেকে শাটার গান, চার রাউন্ড
গুলি, অলঙ্কার এবং নগদ চার হাজার টাকা
জব্দ করা হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১৩
নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে ৮০ নম্বর বাড়ির পাঁচতলায় খুন হন ব্যবসায়ী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ
(৭৫)। বাসায় কিছু সময়ের জন্য তিনি একা ছিলেন।
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, শামসুদ্দিনের
স্ত্রীর ভাতিজা তানভীর আহমেদসহ (৩২) গ্রেপ্তার দুইজন এ হত্যায় জড়িত।
হাফিজ আক্তার বলেন, “নেশার টাকা জোগাড় করতে ও পাওনাদারদের দেনা পরিশোধের
জন্য আপন ফুপা শামসুদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করেন তানভীর আহমেদসহ তার এই দুই সহযোগী।”
হত্যার পর স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা
নিয়ে তারা পালিয়ে যান। এর মধ্যে তানভীর ‘চোরাই পথে ভারতে পালিয়ে গেছে’ বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে
অপরিচিত দুজনকে নিয়ে শামসুদ্দিন আহমেদের বাসায় যান তানভীর। এর কিছু সময় পর নাতনিকে স্কুল থেকে আনতে যান স্ত্রী রাশিদা বেগম।
তিনি বাসায় ফিরে দেখেন শামসুদ্দিন
খাটের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে শামসুদ্দিনকে উত্তরা
ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “কেন নিজের
ফুপাকে গলা কেটে হত্যা করল তানভীর, মামলার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা
পুলিশ। প্রথমে মুসলিমকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী সাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
তানভীর ‘নেশা ও ঋণগ্রস্ত’ জানিয়ে তিনি
বলেন, “গ্রেপ্তার দুজন এবং ভারতে পলাতক তানভীরসহ চারজন মিলে
একটি টিম গঠন করে। এমন আরও কত ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা এখনো ডিটেক্ট করতে পারিনি।
“পলাতক তানভীরের ধারণা ছিল ফুপুর বাসায় গেলে কয়েক লাখ
নগদ টাকা পাওয়া যাবে। এই টাকা দিয়ে সে ঋণ থেকে মুক্ত হবে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত
সবাই নেশার টাকা জোগাড়েরও একটা ব্যবস্থা হবে
বলে মনে করে।”
বাসায় বেড়াতে আসা আত্মীয়ের সঙ্গে আসা অপরিচিতদের সম্পর্কে
সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “ঢাকা শহরে অনেক বাসায় একজনের পরিচয়ে আরও কয়েকজন বাসায় আসে।
“আত্মীয়ের সঙ্গে অপরিচিত কেউ বাসায় এলে সবাই সাবধানে থাকবেন। প্রতিটি
পরিবারের সচেতন থাকা উচিত, নিজের সন্তান কী করছে সবাইকে খোঁজ নেওয়া উচিত।”
ঘটনার দিন তানভীরের সঙ্গে যারা বাসায় গিয়েছিল তারা কী এর আগেও বাসায় গেছে
কি না সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শামসুদ্দিনের ছেলে আসাদুজ্জামান
রিপনের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মামাতো ভাই
তার দুই বন্ধুকে বাসায় নিয়ে এসেছে, বাসার সবাই বিষয়টা খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিল।
এখানে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না।
“ওরা মনে করেছিল আমাদের বাসায় অনেক স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। কিন্তু বাসায়
তেমন কোনো সোনার গহনা ছিল না। এর মধ্যে
আমার বাবা বাধা দিতে গেলে প্রথমে আমার মামাতো ভাই বাবাকে আক্রমণ করে।”
রিপন বলেন, “তানভীরের পরিবারকে আমার মা প্রচুর হেল্প করেছে।
এখনো অনেক সাপোর্ট করে। আমার মামাতো ভাই যে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করত সেখানে
সে বিভিন্ন পণ্য চুরি করত। এই চুরির দায়ে তার চাকরি চলে যায়।”
পলাতক তানভীরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আত্মীয়তার সম্পর্কে এটা শুধু একটা খুন নয়, বিশ্বাসকে ভঙ্গ করা। পলাতক
তানভীরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
আরও পড়ুন