হাওরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের তিনটি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ১ থেকে ৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১২০৯ মিলিমিটার।
২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্ত নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। এই পানি প্রবাহিত হয় ভাটির হাওরের নদ-নদীতে।
পানির প্রবল চাপে হাওরের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যায় প্রথম ধাক্কাতেই; ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাউবোর বাঁধের বাইরের এলাকা। হাওরের বাঁধ নিয়ে অনিয়ম, সময়মতো কাজ না হওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছিল কৃষক।
এবার বন্যা মোকাবেলায় ‘শতভাগ’ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে না পারার কথা স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রতি বছর আগাম বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকি, এবারও ছিল। অনেকে বলেছে কাজ দেরিতে হয়েছে, কাজ দেরির কারণ আমরা ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ফেব্রুয়ারিতে শেষ করি।
“কিন্তু পানি জমে থাকায় সময়মতে কাজ শেষ করতে পারিনি। জানুয়ারিতে শুরু করেছিলাম, কাজটি শেষ পর্যায়ে ছিল। ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”
এ ঘটনায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী ১০ দিনের মধ্যে তারা বন্যার কারণ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন। আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিতে পারছি, এখনকার মতো এত প্রকল্প কখনো নেওয়া হয়নি। সুনামগঞ্জের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্প ৫০ কোটির (টাকা) উপর হলে সমীক্ষার প্রয়োজন আছে। সুনামগঞ্জের জন্য প্রকল্প নিয়েছি ৪৯৪ কোটি টাকার।
“নদী খননের ১৫৪৭ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। একনেকে পাস হলে নভেম্বরে কাজ শুরু করব। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি, আগামী বছর থেকে এ সমস্যা হবে না। আগে এমন সমস্যা হয়নি।”
দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওরবেষ্টিত সাত জেলা থেকে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। সেই বোরো ধান রক্ষায় ফসল রক্ষা বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না। এ কারণে ফসল না তোলা পর্যন্ত বাঁধ নিয়ে শঙ্কা কাটে না কৃষকের।
গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যার আগে পাউবোর প্রকল্পভুক্ত সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ডুবাইল বাঁধ ভেঙে ১৮৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। পরদিনই দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।
৭ এপ্রিল সন্ধ্যার মধ্যে ওই হাওরের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান জলের পেটে চলে যায়। এরইমধ্যে তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের বাঁধও ধসে যায়।
গত বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত ডুবাইল বাঁধ পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী। পরদিন তিনি চাপতি হাওরপাড়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন, শোনেন নানা অনিয়মের কথা।
সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, “হাওরে আমি নিজে গিয়েছি। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে আমি বলতে চাই, এক্ষেত্রে কারেও কোনো গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন
দীর্ঘ সময় নিমজ্জিত, সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধগুলো দেবে যাচ্ছে
বৃষ্টি আসছে, হাওরে ফের বন্যার শঙ্কা