ক্যাটাগরি

উন্নয়ন কাজ থামিয়ে হলেও সারে ভর্তুকি, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে অনড়’।

এর আগে দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় সারের ভর্তুকি রাখা নিয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কৃষিমন্ত্রী উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সেসময় আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে সারে ভর্তুকি দিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে, এই টাকায় আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। এভাবে ‘ভর্তুকি অব্যাহত রাখা কঠিন হবে’।


সারে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া কঠিন: কৃষিমন্ত্রী
 

সারে ভর্তুকি কমছে না, আশ্বস্ত করলেন অর্থমন্ত্রী
 

তবে মঙ্গলবার কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সারের বাড়তি মূল্য এক পর্যায়ে কমে যাবে। এখন দেখা যাচ্ছে দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মনে হয় জুন পর্যন্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এতো টাকা কোত্থেকে আসবে?

“প্রয়োজনে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থামিয়ে রেখে সারে ভর্তুকি দিয়ে যাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে। বলছে স্যার একটা কিছু করেন, আমরা কিভাবে দেশ চালাব।

“কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখনও সারের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে অনড়। তবে সামনের বছর কী হবে আমরা জানি না। পাশের দেশ ভারতেও প্রতিটি সারের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।”

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বে সারের দাম বেড়েছে। সেকারণেই সারের জন্য অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “কোভিড পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

“অতীতের যে কোনো রেকর্ডকে ব্রেক করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভর্তুকি বা প্রণোদনা যাই বলি বর্তমান সরকার দিচ্ছে। প্রতিবছর আমাদের ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি থাকে বাজেটে।

“আমরা মনে করেছিলাম, যে হারে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ছে তাতে জুন পর্যন্ত ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে হারে দাম বাড়ছে, আমাদের ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।”

সব মিলিয়ে সারের ভর্তুকিতে এ বছর খরচ হতে যাওয়া এ অর্থ গতবছরের তুলনায় চার গুণের বেশি। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে লেগেছিল ০৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশে বরাবরই কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কোভিড মহামারীর মধ্যে কৃষি উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য ভর্তুকি দিয়ে যাওয়ার কথা সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলে আসছেন।


ভর্তুকি নিয়ে দুঃশ্চিন্তার পরও সারের দাম বাড়াবে না সরকার: কৃষিমন্ত্রী
 

দেশে যে সার উৎপাদন হয়, তা যথেষ্ট না হওয়ায় বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। তবে এখন পর্যন্ত মজুত পর্যাপ্ত বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী।

সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মোট রাসায়নিক সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৬৭ লাখ টন।

এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি ৭ লাখ টন, ডিএপি ১৫ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন, জিপসাম সাড়ে ৫ লাখ টন, জিংক সালফেট ১ লাখ ৪১ হাজার টন এবং বাকীগুলো জিপসাম, বোরন ও অন্যান্য।

সার ডিলারদের অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “বিচ্ছিন্ন ঘটনা এমন হয়। এই মুহূর্তে সার নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। আমি মিটিংয়ের আগেও অনেক চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি।

“তবে অনিয়ম হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

‘সরবরাহ সঙ্কটের’ কথা বলে রবি মওসুমে তিনটি সারের দাম বাড়িয়ে দেন ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। কিছু জেলায় চড়া দামেও চাহিদামত সার না পাওয়ার অভিযোগ করেন কৃষক।


তিন সারের অতিমূল্যে বিপাকে কৃষক
 

সার তদারকি জোরদারে ডিসিদের নির্দেশ শিল্পমন্ত্রীর
 

সারের মজুদ পর্যাপ্ত, দাম বাড়ালে ব্যবস্থা: কৃষিমন্ত্রী
 

পরে সার চোরাচালান রোধের পাশাপাশি ডিলারদের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সার নিতে না পারে, তা তদারক করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

‘পর্যাপ্ত মজুদ’ রয়েছে জানিয়ে এর আগে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ‘সঙ্কটের গুজব ছড়িয়ে’ কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।

সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাইকৃষ্ণ হাজরা উপস্থিত ছিলেন।