ক্যাটাগরি

গর্ভকালে রোজা রাখা যায়?

তবে গর্ভবর্তী নারী এ সময় রোজা করবেন কি না তা নিয়ে চিন্তায়
পড়ে যান; সারাদিন পানি ও খাবার না খেলে গর্ভের সন্তানের ওপর প্রভাব পড়বে কি না তা নিয়েই
উদ্বেগ। 

বেশিরভাগ সন্তানসম্ভবা এ সময়টায় দ্বিধায় ভোগেন বলে এ বিষয়ে
একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওমানের সংবাদমাধ্যম মাস্কাট ডেইলি। এ বিষয়ে আল হায়াত ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালের গাইনোকলজিস্ট
ডা. আসমা জাবীনের পরামর্শ নিয়েছে তারা।

তিনি বলেছেন, একজন গর্ভবতী নারী যদি শারীরিকভাবে সক্ষম হন
এবং সন্তান গর্ভে নিয়েও রোজা করতে ভয় না পান, তাহলে তিনি রোজা করতে পারেন।      

তবে শরীর যদি সারাদিন অভুক্ত থাকার ধকল নিতে না পারে, সেক্ষেত্রে
ধর্মের নিয়ম অনুসারে বিকল্প উপায়ে ধর্মীয় আচার পালন করা যেতে পারে। কেউ কেউ চাইলে একদিন
পর পর অথবা সপ্তাহে দুয়েক দিন রোজা রাখতে পারেন।

সুস্থ থাকতে রমজানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস

 

গর্ভকালে রোজা রাখলে শরীরের জন্য ঝুঁকি কতটুকু, সেসব জেনে
নিয়ে তারপরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে নারীকে।

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যার
মত স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলে এ সময় গর্ভবতী নারীদের রোজা না রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

আবার কোনো কোনো গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারী যদি রোজা
রাখেন, তাহলে এসময় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি রোজা না রাখা গর্ভবতী নারীর চেয়ে কম থাকে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটে সন্তান থাকা অবস্থায় রোজা
রাখলে নানা রকম শারীরিক জটিলতাও দেখা যায় অনেক সময়। এর কারণ, অন্তঃসত্ত্বাকে নিজের
ও গর্ভের সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়।

কোনো কারণে শরীরে চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি যোগান না হলে কম ওজনের
শিশু জন্ম হতে পারে; অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের
আগে সন্তান প্রসব হয়ে যেতে পারে।

যদি শেষ পর্যন্ত গর্ভবতী নারী রোজা রাখার
সিদ্ধান্ত নিয়েই নেন, তাহলে রোজা রেখেও তার ও গর্ভের শিশুর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে
কিছু পরামর্শ দিয়েছেন আল হায়াত ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালের
গাইনোকলজিস্ট ডা. আসমা জাবীন।    

  • সেহরি এড়ানো যাবে না।
    শক্তি যোগায় এমন খাবার সেহরিতে খেতে হবে। সেই সঙ্গে ফল খেতে হবে ও পানি পান করতে
    হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ভাজাপোড়া ও মশলা দেওয়া খাবার।
  • সারাদিন শরীরে শুষ্কতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এবং প্রস্রাব
    ঠিক রাখতে সেহরিতে পানি পান করতে হবে।  
  • ইফতারে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রোটিন, ফল, খেজুর ও আঁশ রয়েছে এমন
    খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। আর সেই সঙ্গে  এড়াতে হবে উচ্চ শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার।
  • রোজা রেখে গর্ভবতী নারী যদি দুর্বল বোধ করেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে
    ফেলতে হবে।
  • রোজা রেখে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে।
  • বিশ্রাম নিতে হবে আর ঘুমাতে হবে ঠিকমত।
  • চিকিৎসকের দেওয়া ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট সেহরি অথবা ইফতারে খেতে পারেন
    গর্ভবতী নারী।
  • যদি ডায়বেটিস থেকে থাকে তবে রোজা অবস্থায় ক্লান্ত বা অসুস্থ বোধ করলে
    চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রক্তে শর্করার মাত্রা মেপে দেখতে হবে।

রোজার মাসে গর্ভবতী নারী কিছু সাধারণ শরীরচর্চাও করতে পারে। সেই সঙ্গে দ্রুত
হাঁটা, সাঁতার ও যোগাসন করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়ামে শরীর সুস্থ থাকবে, কোমরে
ব্যথা হবে না, ওজন বাড়বে না।

তবে
গর্ভকালে ওজন কমতে দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি ঘন ঘন পানি পিপাসা
পায়, প্রসাব কম হয় অথবা প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়. তাহলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

আরও
যেসব স্বাস্থ্য জটিলতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে –   

  • মাথাব্যথা হলে, মাথা ঘোরালে বা জ্ঞান হারালে,
    বমি হলে
  • যদি গর্ভে সন্তানের নড়াচড়ায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন
    দেখা যায়
  • যদি প্রসব ব্যথা ওঠে; এটা প্রিম্যাচিউর প্রসবের
    লক্ষণ হতে পারে

তবে
সাধারণত গর্ভকালের প্রথম ও শেষ তিন মাস চলাকালে নারীর রোজা রাখা ঠিক হবে না বলেই
মত দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।