ইলন মাস্ক টুইটারের ৯.২ শতাংশ শেয়ার
কিনে নেওয়ার খবর চমকে দিয়েছিল পুরো প্রযুক্তি
শিল্পকে। তারপর মাস্ক টুইটারের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিতে যাচ্ছেন, এমন খবরে শোরগোল
শুরু হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরেই। কনটেন্ট মডারেশন এবং বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে
পরিচালনা পর্ষদে মাস্কের উপস্থিতি ও আধিপত্য প্ল্যাটফর্মটির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে
বলে শঙ্কিত ছিলেন টুইটার কর্মীরাই।
আরও নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে টুইটারের পরিচালনা
পর্ষদের না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাস্ক। পরিচালক পদে বসলে সর্বোচ্চ ১৪.২ শতাংশ শেয়ার
মালিকানার বাধ্যবাধকতায় পড়তেন তিনি। এখন বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পরিচালনা পর্ষদে
না বসায় মাস্কের ওপর যেহেতু আর সর্বোচ্চ শেয়ারের বাধ্যবাধকতা থাকছে না, নিজের শেয়ার
সংখ্যা আরও বাড়িয়ে পুরো টুইটারের নিয়ন্ত্রণ দখল করার চেষ্টা করতে পারেন তিনি।
এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে
দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গর্ডন হাস্কেটে’র জ্যেষ্ঠ গবেষক ডন
বিলসন বলেন, “সপ্তাহ শেষের পরিবর্তনের ফলে পরিচালনা পর্ষদ পর্যায়ের আলাপ নিয়ে টুইট
করবেন এমন একজন খ্যাপাটে পরিচালক নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না প্রতিষ্ঠানটিকে।”
“কিন্তু এই পরিস্থিতির ঠিক উল্টো পিঠ
হচ্ছে, টুইটারকে এখন এমন একজন বিনিয়োগকারীরকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে যিনি এরইমধ্যে কোম্পানির
৯ শতাংশের মালিক এবং বাকি ৯১ শতাংশ কেনার সক্ষমতাও তার আছে। মাস্ক এতোটাই স্পর্শকাতর
যে খুব শিগগিরই তার কাছ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ দেখতে পারি আমরা। অথবা এমন কিছু একেবারে
না-ও হতে পারে।”
মাস্ক প্রসঙ্গে কথা বলার সময় টুইটার
প্রধান পারাগ আগরাওয়ালের বিবৃতির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিলসন। নিজের বিবৃতিতে
কর্মীদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে এমন ভবিষ্যৎ ঘটনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন আগরাওয়াল।
মাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে টুইটারের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকে টুইটারের শীর্ষ কর্মকর্তারা
নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও বাইরের দুনিয়ার উদ্দেশ্যে যে বার্তাগুলো দিয়েছেন তা ‘খানিকটা
হলেও অশুভ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিলসন।
এমন পরিস্থিতিতে টুইটারের শেয়ার মালিকরা
মাস্কের দখলদারিত্ব ঠেকাতে আগেভাগে কোনো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন। তবে বিলসনের
মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে ঝুঁকিও আছে। “এতে খেপে যেতে পারেন মাস্ক এবং টুইটারের জন্য
হয়তো এই তীরটি আপাতত ছিলা থেকে সরিয়ে রাখাই ভালো হবে।”
মাস্ক ও টুইটারের বর্তমান পরিস্থিতি
নিয়ে বিলসনের মত, “বাতাস যে কোন দিকে যাবে আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। আর এই লোকটার
জন্য কোনো কিছুই সম্ভাবনার বাইরে নয়।”
একই ধরনের মত দিয়েছেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান
‘ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজ’-এর বাজার বিশ্লেষক ড্যান আইভস, “এটা পরিষ্কারভাবেই একটা অবন্ধুসুলভ
পরিস্থিতিতে পরিণত হবে।”
“এখন আর বোর্ডেরুমের এক কোণায় বসে পরিচালকদের
কথায় হ্যাঁ-না বলবেন না মাস্ক। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আমার মনে হয় আমরা আগামী
কয়েক দিনের মধ্যেই দেখতে পাবো যে মাস্ক কি আরও আক্রমণাত্মক হবেন, না কি তৎপরতা আরও
বাড়াবেন। এখন সবাই সেটাই দেখতে চায়”– বলেন আইভস।
শেয়ার বাজারে অভিষেকের পর টুইটার শেয়ারের
সবচেয়ে ভালো দিনটি গেছে মাস্ক প্রতিষ্ঠানের ৯ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন এই খবর প্রকাশের
পর। মাস্ক পরিচালনা পর্ষদের যোগ দিচ্ছেন, এমন ঘোষণার পর শেয়ারের দাম বেড়েছিল আরও দুই
শতাংশ। কিন্তু সোমবার থেকেই আবার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে টুইটার শেয়ার।
“মাস্কের কাছে কোন বিষয়গুলোর গুরুত্ব
পাচ্ছে সেটি পরিষ্কার না হলেও আমরা প্রত্যাশা করছি যে মাস্কের টুইটগুলোর প্রতি মানুষের
আগ্রহ আরও বাড়বে। এতে শেয়ার মুল্যের অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে”– মাস্ক টুইটারের
পরিচালক পদে বসছেন না, এ খবর প্রকাশের পর এই মন্তব্য করেছেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান
‘কিব্যাংক’-এর বিশ্লেষকরা।
তবে, আরেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান
‘লুপ ভেঞ্চার্স’-এর অংশীদার জিন মান্সটার বলছেন, ‘নাটকীয়তার বড় অংশটি শেষ’।
মান্সটারের মতে, মাস্ক যদি সত্যিই টুইটারের
দখল নিতে চাইতেন তবে শেয়ার কেনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টাই বুদ্ধিমানের
কাজ হতো। আর টুইটারের দখল নেওয়ার ওপর মাস্ক বেশি সময় দিতেও চান না বলে মনে করেন মান্সটার।
“আপনার বুঝতে হবে যে বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে
কিছু বিষয় তার (মাস্ক) কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি মনে করি তিনি হয়তো সে বিষয়টিকে
সামনে এগিয়ে নিতে চান। বুঝতে হবে যে তিনি হয়তো সুযোগটিকে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাণ
এবং মহাকাশযাত্রার মতো বড় কিছু হিসেবে দেখছেন,” বলেন মান্সটার।
“কিন্তু, দিন শেষে আমার মনে হয় যে এটা
(টুইটারের নিয়ন্ত্রণ দখল) তার জন্য বাড়তি ঝামেলায় পরিণত হবে।”