বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডিজিটাল
অধিকারবিষয়ক একাধিক অলাভজনক সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন
সিদ্ধান্ত নিয়েছে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই। তবে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় রাশিয়ায়
নিজস্ব সেবা বন্ধ করে দিয়েছে তারা সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের
সেবা চালু না-ও করতে পারে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নতুন সিদ্ধান্ত
‘সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের প্রযুক্তিগত ঘটনা’ সংশ্লিষ্ট
ব্যবসায়িক লেনদেনের অনুমোদন দিচ্ছে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। নতুন সিদ্ধান্তে
মেসেজিং, ডোমেইন নিবন্ধন, ইমেইল এবং ফটো-ভিডিওর আদান-প্রদান নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি
পেয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
তবে, নতুন সিদ্ধান্তে রাশিয়ার কোনো আর্থিক
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের অনুমোদন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ; লেনদেন
করা যাবে না রশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোনো সংস্থার সঙ্গে।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার ওপর আরোপিত
নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এড়াতে
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল ‘অ্যাক্সেস নাও’সহ একাধিক ডিজিটাল অধিকারবিষয়ক
সংস্থা।
অ্যাক্সেস নাও-এর আইনি উপদেষ্টা নাটালিয়া
ক্রাপিভা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের
ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি মানবাধিকার রক্ষাকারীদের জন্য এবং ইউক্রেইনে রাশিয়ান ও
বেলারুশিয়ান সরকারের আগ্রাসন নিয়ে প্রতিবেদন করছে এমন স্বাধীন মিডিয়ার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।”
ইউক্রেইনের সামরিক আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে
রাশিয়া থেকে বেশ কয়েকটি টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পর এবং দেশটির
ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট বাতিল করার পর এলো যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত।
বৈশ্বিক ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার
‘মেরুদণ্ড’ হিসেবে পরিচিত দুই প্রতিষ্ঠান কোজেন্ট ও লুমেন স্বেচ্ছায় রাশিয়ার সঙ্গে
সম্পর্কচ্ছিন্ন করেছে মার্চ মাসেই। ‘ইউক্রেইনের নাগরিকদের সমর্থন জানাতে’ রাশিয়ায় নিজস্ব
সেবা বন্ধ করে দিয়েছে ইমেইল মার্কেটিং সেবাদাতা করেছে ‘মেইলচিম্প’ এবং এর পরিচালক প্রতিষ্ঠান
‘ইনটুইট’।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ায় সেবা
বন্ধ করার কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ-নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছে; নিষেধাজ্ঞা
মানতে বাধ্যবাধকতার কথার জানিয়েছে ব্যবসায়িক যোগযোগের প্ল্যাটফর্ম স্ল্যাক।
অন্যদিকে, রাশিয়াকে সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট
সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউক্রেইন। রাশিয়ানদের ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম
(ডিএনএস)’ ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করেছে ইউক্রেইন কর্তৃপক্ষ। তবে
সেই অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছে ডিএনএস তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারনেট কর্পোরেশর ফর
অ্যাসাইনড নেইমস অ্যান্ড নাম্বার্স (আইক্যান)।
রাশিয়ানদের ডিএনএস ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত
করা হলে তার ফলাফল “বিধ্বংসী হবে এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থাটির নির্ভরযোগ্যতা এবং কার্যকারিতার
ওপর স্থায়ী প্রভাব পড়বে” বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইক্যান।
অন্যদিকে ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের
মতো বহুল ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্মগুলো ব্লক করে রেখেছে রাশিয়া কর্তৃপক্ষ। ইউক্রেইনে আগ্রাসন
প্রসঙ্গে দেশের ভেতরের সমালোচনার চাপা দিতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও নানা
কড়াকড়ি আরোপ করেছে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ।