ক্যাটাগরি

মোদী-বাইডেন ভার্চুয়াল বৈঠক, ইউক্রেইন যুদ্ধের ছায়া

দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বাৎসরিক বৈঠক ২০১৮ সাল থেকেই চালু করা হয়েছিল। যেটি ‘২+২ ডায়ালগ’ নামে পরিচিত। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করতে এই বৈঠক চালু হয়।

এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির বর্তমান অবস্থায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত করতে চায়। চীনকে সামাল দিতে এশিয়ার দেশ হিসেবে কৌশলগত করণে ভারতকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। এ কারণে চীনের সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে ভারতকে সাহায্য করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।

ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নানা বিবৃতিতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার কথা বলেছে। কিন্তু এখন গোল বেঁধেছে ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। ওই যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।

দিল্লি কড়া ভাষায় ইউক্রেইনে আগ্রাসন নিয়ে মন্তব্য করলেও কখনো সরাসরি মস্কোর সমালোচনা করেনি। এছাড়া, ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে কয়কটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে তার সবগুলোতে ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে ভারত।

পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার উপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সেগুলোও কৌশলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তেল বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাশিয়া ভারতকে ছাড় মূল্যে তেল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ওই প্রস্তাব গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু একে ভাল চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র।

নিজস্ব ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণেও ভারত তাদের জোট নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে। কারণ, মস্কো দিল্লির পরীক্ষিত মিত্র। এছাড়া, ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রায় ৫০ শতাংশের যোগানদাতা দেশ রাশিয়া।

কিন্তু এখন ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এশিয়ার মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন আদায়ের চেষ্টার মধ্যেই মোদীর সঙ্গে বাইডেনের এই জরুরি বৈঠক হল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বৈঠককে ঊষ্ণ এবং আন্তরিক বলেই বর্ণনা করেছেন।

একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই নেতা। আর এই বৈঠক থেকে বাইডেন সহ বিশ্বকে বার্তা দিয়েছেন মোদী। স্পষ্টতই জানিয়েছেন যে, তিনি একাধিকবার ইউক্রেইন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুজনকেই শান্তি ফিরিয়ে আনার বার্তাও দিয়েছেন।

এমনকী পুতিনকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেও সমস্যা সমাধানের কথাও বলেছেন বলে বাইডেনকে জানান মোদী।

একইসঙ্গে বাইডেন এবং মোদী দুইজনই বৈঠকে ইউক্রেইনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে বুচায় বেসামরিক নাগরিক হত্যা নিয়ে। বুচাতে নিরপরাধ মানুষকে যেভাবে মারা হয়েছে তা নিয়েও বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, “বুচার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।” ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তের কথাও বাইডেনকে বলেছেন তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে নয়াদিল্লির ‘নিরপেক্ষ অবস্থান ব্যাখ্যা’ করেছেন মোদী। তিনি আশা প্রকাশ করে এও বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই রাশিয়া এবং ইউক্রেইনের যুদ্ধের একটা দিক নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে ইউক্রেইনের পাশে আছে ভারত।

অন্যদিকে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন ছাড়াও এদিন দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নসহ ইন্দো-প্যাসিফিক পরিস্থিতি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বাইডেন এবং মোদীর মধ্যে।