ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে কিইভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেইনের উত্তরাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। তারপর এই প্রথম পুতিনকে জনসম্মুখে দেখা গেল।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথমবার মহাকাশে সফলভাবে মানুষ পাঠানোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। এ উপলক্ষ্যে এদিন পুতিন রাশিয়ার ফার ইস্টে ভোস্টচনি মহাকাশ ঘাঁটি পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন তার মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুতিনের ওই সফর সম্প্রচার করা হয়। সেখানে মহাকাশ এজেন্সির কর্মীরা পুতিনকে জিজ্ঞাসা করেন, ইউক্রেইনে অভিযানের লক্ষ্য কী পূরণ হবে?
জবাবে পুতিন বলেন, ‘‘অবশ্যই, আমার এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অভিযানের লক্ষ্য অত্যন্ত পরিষ্কার এবং মহৎ। আমাদের সামনে বিকল্প উপায় ছিল না। এটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।”
তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেইনের দনবাস অঞ্চলে রুশ ভাষাভাষীর জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া এবং রুশ বিরোধী জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রে ইউক্রেইনের অবস্থানের বিনাশ ঘটানো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর পুতিনকে নিয়মিত টেলিভিশনে নানা বক্তব্য দিতে দেখা যেত। কিন্তু এ মাসের শুরুতে ইউক্রেইনের উত্তরাঞ্চল থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তিনি কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন।
তাকে গত সপ্তাহে সর্বশেষ জনসম্মুখে দেখা গেছে একজন আইনপ্রণেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সেখানে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও দিয়েছিলেন। কিন্তু ইউক্রেইন যুদ্ধের বিষয়ে কিছু বলেননি।
আর গত সোমবার তিনি মস্কোর বাইরে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের ওই বৈঠকের কোনো ছবি প্রকাশ পায়নি।
পুতিনের ইউক্রেইন আগ্রাসনকে পশ্চিমারা একটি সর্বোভৌম দেশের ভূমি জোর করে দখলে নেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। যদিও পুতিন বলছেন, প্রতিবেশী দেশকে সামরিকভাবে ‘নিরস্ত্র’ করতে তিনি ‘বিশেষ এ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছেন। ইউক্রেইনকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল বলেছেন।
মঙ্গলবারের বক্তৃতায় পুতিন ৬১ বছর আগে তৎকালীন সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের প্রথম মহাকাশ যাত্রার সঙ্গে আজকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও তা প্রতিরোধের সাদৃশ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘‘সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার কাজও সম্পন্ন হয়েছিল। তারপরও সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম মহাকাশে পৌঁছায়।
“আমরা বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। আধুনিক বিশ্বে কাউকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা অসম্ভব-বিশেষ করে রাশিয়ার মত একটি বিশাল দেশকে।”
জনসম্মুখে দেওয়া এই বিরল বক্তব্যে পুতিন শান্তি প্রক্রিয়াকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য ইউক্রেইনকে দোষারোপও করেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের ভুয়া অভিযোগ করে তারা শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে; “শান্তি আলোচনায় আমরা আবার কানাগলিতে ফিরে গেছি।”
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের লক্ষ্য মহৎ উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ইউক্রেইনের বুচা শহরের রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে পাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা ভুয়া।