ঝাল মসলাদার খাবার খেতে মুখরোচক ঠিক তবে
সবার পেটে সয় না। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুক জ্বালাপোড়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি নানান অসুবিধা
ডেকে আনে এই ঝাল মসলাদার খাবার।
তবে কিছু মসলা আবার অন্ত্রের জন্য ভালো
এবং মল সহজে অপসারণে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাংশনাল মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ
মার্ক হাইম্যান ‘ওয়েল অ্যান্ড গুড’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘মসলা অন্ত্রের
জন্য উপকারী, কারণ মসলা অন্ত্রের ‘ফ্লোরা’কে সুরক্ষিত রাখে। অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোর
সংখ্যা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে মসলা। আবার ধ্বংস করে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া।”
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘গ্যাস্ট্রোএন্টোলজিস্ট’
নিকেত সোনপাল একই প্রতিবেদনে বলেন বলেন, “মসলাদার খাবার আমার খুব পছন্দ। এর স্বাদ এবং
অন্ত্রের ওপর এর উপকারী প্রভাবের জন্য। মানুষ মনে করে ঝাল মসলা মানেই গ্যাস হবে, বুক
জ্বালাপোড়া দেখা দেবে, সৃষ্টি করবে আলসার। এই ধারণা আসলে ভুল। খাওয়ার সময় জ্বালাপোড়া
হয় বলে অন্য কোথাও যন্ত্রণা সৃষ্টি করবেই, এমনটা ভেবে নেওয়া ভুল।”
শুকনা মরিচের গুঁড়া: ডা. সোনপাল তার বদহজমে ভুগতে থাকা রোগীদের খাবারে শুকনা মরিচের গুঁড়া খাওয়া
পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “এই মসলা স্বাদগ্রন্থিগুলো
সক্রিয় করে তোলে, যার ফলাফল হিসেবে লালারস তৈরির মাত্রা বাড়ে। হজমতন্ত্র দিয়ে যাওয়া
সময় আরও তিনটি উপাদানকে সক্রিয় করে এই মসলা।”
পাকস্থলিতে ‘হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড’য়ের
নিঃসরণ, অগ্ন্যাশয় থেকে ‘প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম’ নিয়ে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে আর যকৃত ও
‘গল ব্লাডার’ থেকে করে ‘বাইল’ নিঃসরণ।
এই তিন জৈব রাসায়নিক উপাদানই হজমে সাহায্য
করে এবং খাওয়ার পর পেট ফোলাভাব থেকে বাঁচায়। আর এদের কার্যকারিতে বাড়াতে খাওয়ার পর
এক গ্লাস লেবুর সরবত পান করা ভালো।
আদা: নিউ ইয়র্কের
‘বি জেড নিউট্রিশন’য়ের কর্ণধার পুষ্টিবিদ ব্রিজিট জেইটলিন বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায় আদা। তাই স্বাস্থ্যের জন্য এটি সার্বিকভাবে উপকারী। তবে অন্ত্রের জন্য আদা বিশেষভাবে
উপকারী। কারণ হজমতন্ত্র দিয়ে মল অপসারণের গতি যোগায় আদা। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
কমে।”
অন্ত্রে অস্বস্তি দূর করতেও আদা অত্যন্ত
কার্যকর। রান্নার পদে যোগ করে, চায়ে মিশিয়ে যেভাবেই খান না কেনো উপকার মিলবে।
জিরা: জেইটলিন
বলেন, “জিরা সাহায্য করে ‘বাইল’ নামক জৈব রাসায়নিক উপাদান তৈরিতে। চর্বিকে ভাঙতে ও
হজম করতে এই উপাদান প্রয়োজন। আর চর্বিকে ভাঙতে শরীর যখন বেগ পায় তখনই আপনি আলসেমি ও
পেটফোলাভাব অনুভব করেন, দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।”
তরকারিতে জিরার গুঁড়া, বাটা এমনটি আস্ত
জিরাও ব্যবহার করা হয়। সালাদের ‘সিজনিং’য়েও জিরা ব্যবহার করা যেতে পারে।
মৌরি: জেইটলিন
জানান, অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া, যেগুলো বদহজম ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে সেগুলো
ধ্বংস করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে মৌরি বীজ।
হলুদ: ডা. সোনপাল
বলেন, “প্রদাহনাশক উপাদানে ঠাসা হলুদ। প্রাকৃতিক ‘ল্যাক্সাটিভ’ বলা যায় একে।”
জাপানের ওসাকা’তে অবস্থিত ‘ন্যাশনাল কার্ডিওভাস্কুলার
সেন্টার রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের ‘ইটিওলজি অ্যান্ড প্যাথজেনেসিস’ বিভাগের করা ছোট এক
গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত হলুদ আছে এমন খাবার খান তাদের মল অপসারণ হয়ে যায় দ্রুত।
ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কম থাকে।
আরও পড়ুন