রোগীদের ব্যবহৃত কাপড়, বিছানার চাদর, চিকিৎসক ও নার্সদের বব্যবহৃত পোশাক জীবাণুমুক্ত করাসহ পরিচ্ছন্ন করার কাজটি করা হত বেসরকারি উদ্যোগে ঠিকাদারের মাধ্যমে। এতে সরকারি হাসপাতালটির বিপুল অর্থ খরচ হয়ে যেত।
সেই অবস্থার অবসানে জেনারেল হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে নিজস্ব ‘ওয়াশিং প্ল্যান্ট’। আন্দরকিল্লা এলাকায় অবস্থিত হাসাতালটিতে বসানো প্ল্যান্টটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রায় দুই কোটি টাকা অর্থ সহায়তায় হাসপাতালে সম্পূর্ণ আধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্টটি বসানো হয়েছে।
২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসপাতালটিতে আগে কখনও ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছিল না। এতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম বিশেষ করে চিকিৎসক-নার্সদের পোশাক পরিচ্ছদ, রোগীদের ব্যবহৃত বেডশিটসহ বিভিন্ন কাপড় ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেওয়া হত।
“এতে সময়ও লাগত বেশি, অর্থেরও অপচয় হত অনেক। সর্বশেষ কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সময় রোগী ও সেবাপ্রদানকারীদের পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্নতার জন্য কাপড় বেশি জমে যেত এবং সেগুলো পরিচ্ছন্ন হয়ে আসতেও সময় লাগতো বেশি। ওই সময়ে আমরা হাসপাতালের জন্য নিজস্ব একটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।”
জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওয়াশিং প্ল্যান্টের জন্য অর্থ চাওয়া হয়। ১ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াশিং মেশিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রায়ার মেশিন ও আয়রন মেশিন দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হয়।
চীনে তৈরি এসব মেশিন সরবরাহ করে ঢাকার ব্লু ক্যানভাস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেশিন ও প্ল্যান্ট স্থাপনে আরও কিছু টাকা খরচ হয়।
ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “আগে প্রতি বছর জেনারেল হাসপাতালে বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবহার্য কাপড় পরিষ্কার করাতে গিয়ে ২৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ হতো। নতুন ওয়াশিং প্ল্যান্ট হওয়ায় এ খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে।”
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিগগিরই এ প্ল্যান্ট উদ্বোধন করবেন বলেও জানান তিনি।
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে কাপড় পরিষ্কার ও ইস্ত্রি করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে কাজ দিতে হত। এতে অনেক সময় লাগত। এখন আমরা নিজেরাই এ কাজ করব। এতে দিনের কাপড় দিনেই জীবাণুমুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবে, এতে অর্থও বাঁচবে অনেক।”
১৯০১ সালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর চিকিৎসেবা শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে অবহেলার শিকার হলেও ধীরে ধীরে সরকারি হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামের হাসপাতালটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কোভিড-১৯ এর বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করার পর এতে রোগীর চাপ বাড়ে এবং পর্যায়ক্রমে ১৮ শয্যার আইসিইউ সেবাও চালু হয়। ওই সময়েই জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হয়। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আধুনিক বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামও দেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালটিতে।
ডা. রব বলেন, জেনারেল হাসপাতাল কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও বর্তমান সময়ে রোগী অনেক কমে এসেছে। তবে হাসপাতালটিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাও নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। মেডিসিন-গাইনি ও অন্যান্য বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে দেড়শ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকে প্রতিদিন।
কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য শয্যা আগের চেয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে কোভিডের চিকিৎসা বন্ধ হয়নি। কোভিড আইসিইউ পূর্বের চেয়ে কমিয়ে ছয়টিতে নামানো হয়েছে। বাকি ১০টি সাধারণ রোগীদের জন্য রাখা আছে।