বৃহস্পতিবার নগরীর ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ, সিআরবি শিরীষ তলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন এবং বাদশা মিয়া রোডের ক্যাম্পাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট বর্ষবরণের আয়োজন করেছে।
শুরুতে আয়োজকদের যে সময় পর্যন্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল, এরমধ্যে তিনটি আয়োজনেই তাতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
ডিসি হিল প্রাঙ্গণে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হবে সকাল পৌনে ৭টায়। আগে টানা ৪২ বছর বর্ষবরণের আয়োজন করলেও গত দু’বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা হয়নি।
এবারের আয়োজন বিষয়ে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুচরিত দাশ খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৌনে ৭টায় আমাদের আয়োজন শুরু হবে। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হবে গান, নাচ, আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়।
“এবার ৩২টি সংগঠন পারফর্ম করবে। টানা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে। এরপর নামাজের বিরতি দেয়া হবে। আমরা চাই দেড়টা থেকে দু’টার মধ্যে শেষ করতে। ঢাকাতেও এবারের আয়োজন বেলা ২টার মধ্যে শেষ হবে।”
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে খোকন বলেন, “পুলিশের সাথেও পৃথক সভা হয়েছে। তারা নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা করবে। জেলা প্রশাসক আয়োজনে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এনডিসি মো. তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিসি হিলের আয়োজন আড়াইটার মধ্যে শেষ হবে বলে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিসি ক্যামরা স্থাপনসহ সব সহযোগিতা করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দলও থাকবে।”
নগরীর এম এম আলী রোডে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।
শোভাযাত্রা শেষে একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন শেষ হবে সকাল সাড়ে ১০টায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি শেষের পথে। আশাকরি বুধবারের মধ্যে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা শুরু হবে।”
নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় এবছর ১৪ তম বারের মত বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের আয়োজন করেছে নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম। তবে এবারের বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় দুদিনের আয়োজন বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করবেন পরিষদ সভাপতি এম এ মালেক। সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষেই দিনের আয়োজন শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হবে। চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত।
শামীম আহমেদ বলেন, সঙ্গীত, নৃত্যৃ ও আবৃত্তি থাকবে পরিবেশনায়। সরকারি নির্দেশনা বেলা ২টার মধ্যে আয়োজন শেষ করতে হবে। অনুষ্ঠান স্থলের পাশেই মসজিদ আছে। আমরা ১টার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ করব।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আয়োজকদের সাথে সোমবার বৈঠত হয়েছে। সেখানে আমরা নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছি। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।
“ঢাকার মত কোনো নির্দেশনা আমাদের দিতে হয়নি। আয়োজকরাই বলে দিয়েছে দুপুর ১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করবে। আমরা সম্মত হয়েছি।”
বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক আয়োজনের কথা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা ২টার মধ্যে শেষ করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান চারুকলার পরিচালক প্রণব চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমরা সেভাবে অনুষ্ঠানসূচি আবার সাজানোর চেষ্টা করছি। যাতে ২টার মধ্যেই শেষ করা যায়।”
বর্ষবরণের আয়োজনে সময় বেঁধে দেয়ার বিষয়ে সম্মিলিত আবৃত্তির সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারই প্রথম নয়। এরআগেও নিরাপত্তার কথা বলে বিভিন্ন সময় বর্ষবরণের আয়োজনকে সীমিত করা হয়েছে।
“এগুলো সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার উপর একধরণের বাধা। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পরবে। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রধান সর্বজনীন উৎসব নববর্ষ। এভাবে এই আয়োজন সংকুচিত করা মানে সমাজকে পিছিয়ে দেওয়ার লক্ষণ।”
রাশেদ হাসান বলেন, “মৌলবাদী শক্তির আস্ফালন আছে বলে অতীতেও দ্রুত আয়োজন শেষ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রকারান্তরে এটা ধর্মীয় মৌলবাদী অপশক্তিকে প্র্রশ্রয় দেওয়া। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী এতই দুর্বল? এটা শুভ ইঙ্গিত নয়। অশনি সংকেত।”
আরও পড়ুন