এই ভয়ঙ্কর জুটির মুখোমুখি মঙ্গলবার রাতে চেলসি আবারও হতে যাচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালের ফিরতি লেগে লড়বে দুই দল। এবার ভেন্যু রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবেউ।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে প্রথম লেগে চেলসি পারেনি রিয়ালকে আটকাতে। হেরে যায় ৩-১ গোলে। কিন্তু শেষের আগে শেষ বলে দেওয়া যাচ্ছে না, তাই এখনও কাজ বাকি কার্লো আনচেলত্তির দলের।
বাকি কাজটুকু সারতে আনচেলত্তির ভরসা বেনজেমা-ভিনিসিউস জুটিতে। দারুণ বোঝাপড়া দুজনের মধ্যে। বনিবনাও বেশ। একটু চাহনি বা ইশারা কিংবা একটু অঙ্গভঙ্গিতে দুজনে বুঝে নেন নিজেদের করণীয়টুকু। অথচ, কিছুদিন আগেও এই জুটি নিয়ে আশা ছিল না। স্রেফ এক আলাপচারিতায় সবকিছু বদলে গেল; অনিশ্চয়তার মেঘ সরিয়ে রিয়ালের জন্য আলোর বার্তা হয়ে এলেন এই ফরাসি-ব্রাজিলিয়ান জুটি।
ভুলটা ছিল বেনজেমার এবং সেটা তিনি বুঝেছিলেন। ভিনিসিউসও প্রতিভাবান, যা ঘটেছে, তা থেকে শিখেছিলেন তিনিও। ফলে দুজনের খেলায় উন্নতির ছাপ পড়তে থাকে একটু একটু করে। আনচেলত্তির আক্রমণাত্মক কৌশলের সঙ্গে দ্রুত দারুণভাবে মানিয়েও যায় এই জুটি।

রিয়ালের আক্রমণভাগের মূল ভিত্তি এ দুজনই। এই মৌসুমে রিয়াল এ পর্যন্ত পাঁচ প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গোল করেছে ৯৩টি, এর মধ্যে ৫৪টি গোল বেনজেমা-ভিনিসিউস জুটির। ৩৭টি বেনজেমার, ভিনিসিউসের ১৭টি। গত শনিবারও গোলে অবদান রেখেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার; সব মিলিয়ে মৌসুমে তার অ্যাসিস্টের সংখ্যা ১৭টি, বেনজেমার চেয়ে চারটি বেশি।
এই দুজনকে ছাড়া বর্তমানের রিয়াল মাদ্রিদ হতো না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে বেনজেমা এরই মধ্যে ১১বার গোলের আনন্দে ডানা মেলেছেন, তার চেয়ে এক গোল বেশি কেবল বায়ার্ন মিউনিখের রবের্ত লেভানদোভস্কির। ইউরোপ সেরার এ আসরে ভিনিসিউসের অ্যাসিস্ট পাঁচটি, সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের পাতায় শীর্ষে থাকা ব্রুনো ফের্নান্দেসের চেয়ে দুটি কম।
ভিনিসিউসের ওই পাসগুলোর চারটি থেকে গোল করেছেন বেনজেমা। এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি শট (১৮টি) লক্ষ্যে রাখা খেলোয়াড়ও তিনি। ঘটনাক্রমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি সেভও (৩৯টি) রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার।
ভিসিসিউসের সঙ্গে বেনজেমার বোঝাপাড়া শুরুতে ছিল না এরকম। ২০২০ সালের অক্টোবরে তো পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছিল আলোচিত ওই একটি ঘটনা কেন্দ্র করে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিলিয়ানের পারফরম্যান্স ছিল বড্ড সাদামাটা। বিরতির সময় টানেলে ফেরলদ মঁদিকে তো বেনজেমা বলেই বসেন, “মনে হচ্ছে ও (ভিনিসিউস) আমাদের বিপক্ষে খেলছে। ও একটা স্বার্থপর।”

এক কান, দুই কান হয়ে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। হাঁটে হাড়ি ভেঙে দেন মূলত মঁদিই। তাতে ধরে নেওয়া হয় বেনজেমা-ভিনিসিউস জুটির শেষের শুরু। কিন্তু ওই এক আলাপেই সবকিছু বদলে যায় নিমিষেই।
ওই ঘটনার পরের দিন ভালদেবেবাসে পৌঁছানোর পর বেনজেমা খুঁজে বের করেন ভিনিসিউকে। তার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। ওই সময় ফরাসি স্ট্রাইকার ভিনিসিউকে বলেছিলেন, তার কাছে সে ছেলের মতো এবং তাকে সে সেই দৃষ্টিতেই দেখেন।
বয়সের দিকে তাকালে বেনজেমা বাড়িয়ে কিছু বলেননি। বর্তমানে তিনি ৩৪ বছর বয়সী। ভিনিসিউসের বয়স মোটে ২১ বছর। সত্যিটা হচ্ছে, ১৩ বছরের ছোট এই ব্রাজিলিয়ানকে শুরুর দিকে রিয়ালে বরণ করে নিয়েছিলেন তিনিই। সেসময় মার্সেলো ও কাসেমিরো মাদ্রিদে ছিলেন না, ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলতে ব্রাজিলে দলে ছিলেন। তাদের অবর্তমানে বেনজেমাই ছিলেন ভিনিসিউসের গাইড, শিক্ষক, সবকিছু।
স্রেফ টানেলের ওই ঘটনায় সব ভেস্তে যেতে বসেছিল। কিন্তু ওই ঘটনার পর দুজনের আলাপচারিতা ছিল খুবই আন্তরিক। দুজনের কথা বলার পর বিষয়টি মিটে যায়। আসলে মদিঁর সঙ্গে ওই আলাপ বাইরে এসে পড়াতেই তৈরি হয়েছিল এত বিপত্তি।
যাই হোক, সব দোটানার অবসান হয়। ভিনিসিউস এখন মাঠে বেনজেমাকে দারুণ উদাহরণ হিসাবে মানেন। দুজনের ওই আলাপনই টানাপোড়েনের বরফ গলতে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থার জায়গা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। যার ফলে ইউরোপিয়ান ফুটবলে তারা হয়ে উঠতে পেরেছেন সবচেয়ে নির্ণায়ক জুটি।
প্রতিনিয়ত মাঠে তারা দুজন দুজনকে খুঁজে নেন। নিজেদেরকে বোঝেন এবং সর্বপরি তাদের একে অপরকে প্রয়োজন এবং পাশে দুজন দুজনকে পেলেই তাদের সেরাটা বেরিয়ে আসে। বর্তমান সময়ের ফুটবল সেটা দেখছেও।