এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, রোজা ও ঈদ ঘিরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চাঁদা না পেলে পণ্য পরিবহন ও বিক্রিতে বাধাও দেওয়া হচ্ছে।
র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল সোমবার রাতে ঢাকার রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন ও ওয়ারী এলাকায় একযোগে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন চাঁদাবাজ এবং ২০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।
পরে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করেন। ব্যবসায়ীরাও এ সময় বাজারে তাদের পণ্য সরবরাহ বাড়িয়েছেন।
“এই সুযোগে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই চক্রটি দোকান মালিকদের কাছ থেকে দিনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হারে চাঁদা আদায় করে আসছিল।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. আওয়াল (৪৫), মো. আতিক (৩৫), মো. আলাউদ্দিন (৪৫), মো. ইসমাইল (৫৪), মো. জুয়েল (৪৩), মো. দুলাল (৪৫), মো. বদির উদ্দিন বাবু (৫০), মো. বাবুল (৫২), মো. বাবুল হাওলাদার (৪৯), মো. মোস্তফা হাওলাদার (৫০), মো. সাহেব আলী (৫৪), মো. তানভির (৪০),মো. জালাল হোসেন (৩০), নিয়ামুল হোসেন (২৯), মো. ময়নুল হোসেন (৪৫), মিন্টু খান (২৫), মো. মেনু মিয়া (৩৮), মো. রনি (৩১), মো. রানা(২৪), মো. শরীফ সরকার (৩৫), মো. মহসীন (২৫), রনজিৎ দাস (৪৮), রাসেল শিকদার (২১), মো. হারেজ (৪৩)।
এছাড়া মো. বাদশা (২৯), আল আমীন সর্দার (২০), মো. শহীদ (২৭), মো. রাজু (৩৫), মো. রফিক (২৫), মো. রোমান (৪২), মো. আকবর (২০), ইমন (১৯), রাব্বি (১৯), মো হৃদয় (১৯), মো. হোসেন (১৯), মো. আল আমিন (২২), মো. ইসমাইল হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম মিশু (২৫), মো. নুরুল হক (২৫), মো. রতন (২২), রাব্বি (১৯), মো. শফিকুল ইসলাম (২৪), মো. সাগর হোসেন শামীম (২০), উজ্জল মিয়া (২০), মো. আক্কাছ (৫০), মো. ইউছুফ (৩২), মো. জাহিদ (৪৪), মুন্সি মুছা আহমেদ (৫২), মো. রবিন মিয়া (৩২), মো. সাগর (২৭), মো. সুজন (৪৫), মো সোহাগ মৃধা (৩২), ও সোহেল সরকার (৩১) আছেন গ্রেপ্তারদের মধ্যে।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩০ টাকা, ৬০টি মোবাইল, ও ৪৫টি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
যেসব স্থানে অপরাধ বেশি
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ ও বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
“কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত। পোল্ট্রি মুরগি বহনকারী কোনো গাড়ি এই বাজারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির ধরন ও মুরগীর পরিমাণের উপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমাণ ঠিক করে দেওয়া হয়।”
চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয় জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গাড়ির মালামাল নামাতে বা বিক্রিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়।
“যেসব গাড়িতে তুলনামূলকভাবে ছোট, অসুস্থ বা মৃত মুরগী পাওয়া যায়, তাদের বেশি চাঁদা দিতে হয়। প্রতি রাতে এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রমনা থানার শান্তিনগরে রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়।
“সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। এই কাজে চার থেকে পাঁচজনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় লাখের বেশি টাকা উত্তোলন করা হয়।
“চাঁদার টাকা না দিলে দোকানদারদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় এবং হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মারপিট করে। কথা মতো কেউ চাঁদা না দিলে দোকান বসতে না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। লেগুনাস্ট্যান্ডের কেউ চাঁদা না দিলে লেগুনা না চলতে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে চালকরা পেটের দায়ে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়।”
ঈদের কেনাবেচায় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় র্যাবের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।