শুরুতেই গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচার মাধ্যমে চলতি বছর নভেম্বরের
মধ্যে দেশে প্রথম এ ধরনের ‘ফিউচার মার্কেট’ চালু করতে কাজ শুরু করেছে দেশের দ্বিতীয়
স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসই।
সরকারের সবুজ সংকেতের পর এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির
অনুমোদন আগেই পেয়েছে চট্টগ্রামের স্টক এক্সচেঞ্জটি, এবার তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।
মঙ্গলবার ঢাকার র্যাডিসন ব্লু হোটেলে এ এক্সচেঞ্জ চালু করতে
পরামর্শক হিসেবে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে
সিএসই।
সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক ও এমসিএক্সের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিএস রেড্ডি চুক্তিতে সই করেন।
পরে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরের
দিকে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। চূড়ান্ত অনুমোদন আমাদের আছে। এখন সফটওয়্যার, অন্যান্য
অবকাঠামো এবং নীতি পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য এ সময়টুকু লাগবে।
“প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটা পণ্য নিয়ে আমরা এগোব। কাঁচামাল হিসেবে
আমদানি করা তুলাকে পণ্য হিসেবে যুক্ত করব। খাদ্যপণ্য হিসেবে গম ও বুলিয়ানের মধ্যে হয়তো
সোনাকে প্রাথমিক পণ্য হিসেবে রাখা হবে।“
এমসিএক্স পরামর্শক হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য কাজ করবে জানিয়ে
তিনি বলেন, “এটা শতভাগ সিএসইর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় চলবে।
“আমরা যেই নিয়ম পদ্ধতিগুলো ঠিক করব, সেগুলো বিএসইসি, বাংলাদেশ
ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিভিন্ন সরকারি এজেন্সির সঙ্গে
বসে ঠিক করা হবে।”
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ
কী?
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হচ্ছে পণ্য বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের
মধ্যে মধ্যস্থতাকারী একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা ওই প্রতিষ্ঠানের
নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে নিজেদের মধ্যে বিপণন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
যেমন-একজন ভুট্টা চাষি তার ভুট্টা মাঠ থেকে উত্তোলনের এক মাস
আগেই কমোডিটি এক্সেচেঞ্জের মাধ্যমে তার শস্যের দাম ঠিক করতে এবং বিক্রি নিশ্চিত করতে
পারবেন। পরে তিনি এক্সেচেঞ্জের মধ্যস্থতায় পণ্যের দাম বুঝে পাবেন। আর ক্রেতা বুঝে পাবেন
পণ্য।
দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠায় সিএসই-এমসিএক্স চুক্তি হচ্ছে
আবার ধরা যাক, একজন কৃষক ছয় মাস পর বিক্রির জন্য এক মণ তুলা
আনলেন। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সেটার দাম নির্ধারিত হল- কোনো একজন ক্রেতা পেলেন
সেই পণ্যের চুক্তি। অন্যদিকে, ওই তুলা থাকল কৃষকের গুদামে। ছয় মাস সময় পূর্ণ হওয়ার
পর যার কাছে থাকবে ওই তুলার ক্রয়াদেশ, তিনি তা পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে চালু এমন এক্সচেঞ্জে পণ্য কেনাবেচা
হয় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে; সিএসইতেও তাই হবে।
সিএসই জানায়, বাংলাদেশের মত একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে পণ্যের
দামে স্থিতিশীলতা আনার মাধ্যমে ফসল উত্তোলন পরবর্তী ঝামেলা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে
এ এক্সচেঞ্জ। পাশাপাশি পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা আনবে এবং ব্যয় সংকোচন করবে।
নতুন দিগন্তের সূচনা
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)
চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের
বিপণন খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র
ভারতের সহযোগিতা এর পেছনে রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। এ মার্কেটকে
সক্রিয় করার জন্য সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হবে। কারণ এ পদ্ধতি চালু হলে তা মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণও সহজতর করবে।“
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “কিছুদিন
ধরে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, ভোক্তারা ক্ষুব্ধ। আবার শুনতে পাচ্ছি, বিক্রেতারা তাদের
মূল্য পাচ্ছে না।
”আজকের আলোচনায় যে বিষয়টি উঠে আসছে, সেখানে আমি স্বস্তি লাভ
করছি যে, এ সমস্যাটারও সমাধান আছে। এ এক্সচেঞ্জ আমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। আমি
বিপদের মধ্যে আছি, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে; কিন্তু সাহস পাচ্ছি আজকে এই কথাগুলো শোনার
মধ্য দিয়ে।”
তিনি বলেন, “আমরা যদি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ করতে পারি, বাজারের
অস্থিরতা কমাতে পারব; অনেক অনেক আধুনিকতম জায়গায় যেতে পারব। এক্সচেঞ্জগুলো মানসম্মত
লেনদেন করে, যা দ্রুত ও গতিশীল লেনদেনের সুযোগ করে
দেয়।
”আজকে যেটা হচ্ছে, এটা একটা মাইলফলক। আমরা যারা দেশকে নিয়ে
ভাবি, যারা স্বপ্ন দেখি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ,
উন্নত বাংলাদেশ তাদের জন্য এটা একটা ভালো পদক্ষেপ।”
অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন,
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতির ক্ষেত্রে
একটি পরিবর্তনের মুহূর্ত।
”এটি কেবল দাম নির্দিষ্ট রাখতে ভূমিকা রাখে না। পাশাপাশি এটা
বহুমুখী ব্যবস্থা হিসেবে উৎপাদক ও পণ্যের ভোক্তাকে বাজারের প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জ
বুঝতে সহায়তা করে। আপনি যদি বুঝতে পারেন মার্কেট কেমন যাবে, তাহলে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ
উৎপাদনের পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন।”
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রমের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নেও
ভারত সহায়তা করবে উল্লেখ করে হাই কমিশনার বলেন, এর মাধ্যমে গুদামজাতকরণ ও কোল্ডচেইনের
মত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায়
সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।”