ক্যাটাগরি

মানুষের আয় বাড়বে, এবার এমন বাজেট দিতে হবে: সিপিডি

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে নিজেদের সুপারিশ জানাতে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়।

মহামারী এবং তা ঠেকানোর লকডাউনে গত দুই বছরে দেশের ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে বলে গত বছর বেসরকারি এক জরিপে উঠে এসেছিল।

সিপিডি বলেছে, মহামারীর কারণে বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত মানুষের আয়ের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আয় কমে গেছে। এরমধ্যে সারাবিশ্বে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা গেছে কমে।

মহামারীতে প্রান্তিক পরিবারের ঋণ বেড়েছে : জরিপ

অনুষ্ঠানের মুল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আগামী বাজেটের স্টান্সটা হতে হবে জনগণের কল্যাণ, এবং মানুষে ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

“এবারের বাজেটের মুল দর্শন হওয়া উচিৎ সমাজে যারা পিছিয়ে আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের মাঝে কীভাবে আয় পুনর্বন্টন করা যায় এবং কোভিডের প্রেক্ষিতে সম্পদের যে অসাম্যের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কীভাবে দুর করতে পারি। মানুষের হাতে খাদ্য এবং অর্থ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, সেটা হতে হবে আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্য।”

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও এতে অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি। ফাহমিদা বলেন, “প্রতিবছর আমরা জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ ঘাটতি বাজেট ধরি। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঘাটতি বাজেট তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। তাই এবার ঘাটতি বাজেট প্রয়োজনে কিছুটা বেশি হলেও সমস্যা হবে না।”

কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদক ও ক্রেতা উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় একটি নীতিমালা করার কথাও বলছে সংস্থাটি।

উচ্চ পণ্যমূল্যের কারণে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মান আরও নিচে না নামে, সেজন্য বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন ফাহমিদা।

“তাদের খাদ্য এবং নগদ সহায়তা দিতে হবে, সেজন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।”

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, “এসব ব্যয় শুধু বাড়ালেই হবে না, এগুলোর গুণগত মানও বাড়াতে হবে।”

এজন্য প্রয়োজনে শুল্ক সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়ে ফাহমিদা বলেন, বর্তমানে সরকার যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে, তা আরও কিছু দিন বজায় রাখা যায়।

রপ্তানি ও বাজার দুটোরই বহুমূখী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী রপ্তানি প্রণোদনা পুনর্মূল্যায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রবাসী আয়ের উপর প্রণোদনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

ভর্তুকি পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি এবং জ্বালানির ক্ষেত্রে এমন নীতি নেওয়া উচিৎ, যাতে মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে তা ব্যবহার করতে পারে।”

তিনি মূল্যস্ফীতির হিসাব সঠিকভাবে করার দাবি জানিয়ে বলেন, “কারণ সঠিক তথ্য ছাড়া সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় না।”

অপচয় বন্ধ করার পাশাপাশি সুশাসন বজায় রেখে ব্যয় করার সুপারিশ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং যথা সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় যে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার কথা, তা নাও হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হলে অতিরিক্ত আয়ও করতে হবে মন্তব্য করে ফাহমিদা বলেন, “কিন্তু আমাদের রাজস্ব আয় জিডিপির বিপরীতে ৮ শতাংশেই রয়ে গেছে। তা বাড়াতে না পারলে জনগণের জন্য ব্যয় করা সম্ভব হবে না।

“আমরা যদি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ বাড়াতে না পারি, তাহলে জনগণের কল্যাণের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন, তা করা সম্ভব হবে না।”

বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে শেষ করতে না পারায় সেসব প্রকল্পের ঋণ ফেরতের চাপ, রপ্তানি বাড়লেও আমদানিও বৃদ্ধি পাওয়ায়, পণ্যের মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় আরও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই আমরা কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে আছি।”

বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফাহমিদা বলেন, “আমাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যেসব বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলো পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে সুশাসন বা দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি তুলনীয় নয়, কিন্তু এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২২ বিলিয়নের মতো। অর্থবছর শেষে এটা ৩০ বিলিয়নে উন্নীত হতে পারে।”

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমুল্য বৃদ্ধি পাওয়াকে এর কারণ দেখিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, বাজার স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটা কমে আসবে।

ঢাকার ধানমণ্ডিতে সিপিডির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি সম্প্রচার হয়। সিপিডির গবেষনা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে ছিলেন।