দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি এক জরিপ চালিয়ে এই চিত্র পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভুতভাবে আদায় এবং বেসরকারি হাসপাতালে সেবা সম্পর্তিক তথ্য না দেওয়া, দুর্ব্যবহার ও সেবা গ্রহণে প্ররোচিত করার মতো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে তারা।
মঙ্গলবার টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে ‘করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় সুশাসন : অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক তাদের ‘গবেষণা প্রতিবেদন’ তুলে ধরে।
টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
হাসপাতাল থেকে সেবাগ্রহণকারীদের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার ২২ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে ৬১ শতাংশ দেরিতে সেবা পেয়েছেন, কোভিড ইউনিটে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ রোগী, ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ রোগীকে সেবা সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
এছাড়াও নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও দালাল কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২ দশমিক ২ শতাংশ রোগী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২৬ দশমিক ১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা নমুনা দিতে গিয়ে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
জুলকারনাইন বলেন, “গবেষণায় আমরা দেখেছি, ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি, নমুনা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ফিরে এসেছেন ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ, পরীক্ষাগারে কর্মীদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, নমুনা দেওয়ার জন্য একাধিকবার কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতা।”
জরিপ অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে গড় সময় লেগেছে আড়াই দিন। আর সর্বোচ্চ সময় লেগেছে ৯ দিন।
জুলকারনাইন জানান, পরীক্ষাগারের স্বল্পতা, পরীক্ষাগারে অতিরিক্ত ভিড়, নমুনা প্রদানে জটিলতা, অতিরিক্ত খরচ- করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিরুৎসাহিত করেছে।
“নিজ জেলায় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় জটিল রোগীদের ভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে। ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ আক্রান্ত রোগীকে অন্য জেলায় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন পেয়েছেন দেরিতে। ১ দশমিক ৭ শতাংশ রোগী অক্সিজেন পাননি। ১৫ শতাংশ রোগী প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভেন্টিলেশন সেবা পাননি।”
২০২১ সালের অগাস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৪টি জেলার কোভিড-১৯ সেবাগ্রহীতাদের টেলিফোন জরিপ এবং ৪৩টি জেলার ১০৫টি কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা শোনা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী প্রয়োজনে আইসিইউ সেবা পায়নি এবং ৯ শতাংশ রোগী কখনোই আইসিইউ সেবা পায়নি।
“সেবাগ্রহীতাদের মতে, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার কারণে যথাসময়ে সেবা না পাওয়ায় হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতার রোগের জটিলতা বেড়েছে।”
এছাড়া ৪৫টি টিকাকেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি প্রতিবন্ধীবান্ধব ছিল না, ফলে টিকা পেতে তাদের দু্র্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে সাফল্যের সাথে কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে।”
কোভিড টিকদানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের এগিয়ে থাকা, ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর একটি ডোজ এবং ৬৭ শতাংশের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার কথা বলেন তিনি। বস্তিবাসীসহ প্রান্তিক জনগো্ষ্ঠীর টিকা পাওয়ার কথাও উঠে আসে তার কথায়।
তবে টিকা দানে সরকারি ব্যয়ের চিত্রে স্বচ্ছতা না দেখার কথা জানিয়েছে টিআইবি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, টিকা কেনা থেকে ব্যবস্থাপনায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় অন্যান্য উৎস থেকে আমরা দেখেছি, এখানে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে।
“এই তারতম্যের অন্যতম কারণ তথ্য প্রকাশে ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা। এ বিষয়গুলোতে সরকারকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে।”