ক্যাটাগরি

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যা, ভূমিধসে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু

মঙ্গলবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের জরুরি উদ্ধারকারী দলগুলোকে সহায়তা করতে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ডাকা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা ব্যাপক বৃষ্টিতে নদীগুলোতে বন্যা দেখা দেয়  এবং পূর্ব উপকূলীয় ডারবান শহর ও এর আশপাশের  এলাকায় বহু ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন রাস্তা ও এলাকা দিয়ে কাদার স্রোত বয়ে যায়। 

উষ্ণ আবহাওয়া ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল সাগর সৈকতের জন্য পরিচিত পূর্ব উপকূলজুড়ে থাকা ছুটি কাটানোর বাড়ি ও খুপড়ি ঘরগুলো পানির তোড়ে ভেসে যায়।

এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডারবানের মেয়র ম্যাক্সোলিসি কাউন্ডা বলেন, “ঝড়ের তীব্রতায় আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছি।”

চলতি বছর ঝড়ের কারণে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, বহু মানুষের মৃত্যু ও হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকায় ঝড়ের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে।

প্রতিবেশী মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও মালাওয়ির মতো দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশেও ফেব্রুয়ারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও বন্যা হচ্ছে।

মঙ্গলবার নতুন একটি ঝড়ের প্রভাবে ডারবান শহরের অধিকাংশই পানিতে তলিয়ে যায়। জরুরি বিভাগের শেয়ার করা ফুটেজে জাতীয় মহাসড়কের কিছু অংশকে নদীর মতো দেখাচ্ছিল। অনেকগুলো শিপিং কন্টেইনার স্থানচ্যুত হয়ে পানিতে ভেসে যায়।

ডারবানের উত্তরে ভেরুলাম শহরে রাতে ঘরের ছাদ ধসে দুই জনের মৃত্যু হয়, জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি বিভাগ।

উদ্ধার কর্মীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা উঁচু জায়গায়, বাড়ি, অফিস ভবন ও একটি হিন্দু মন্দিরের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

ডারবানের কেন্দ্রস্থল থেকে ৪০ মিনিটের গাড়ি দূরত্বের টোনগাতে সোমবার সন্ধ্যায় এক নারী তার সন্তানদের নিয়ে গাড়িযোগে বাড়িতে ফেরার সময় নদী উপচে ধেয়ে আসা পানির প্রবল তোড়ে গাড়িসহ ভেসে যান। পরে ওই নারী ও তার দুই সন্তানের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও তৃতীয় সন্তান নিখোঁজ রয়েছে।

বন্যার কারণে হওয়া ভূমিধসে ওই অঞ্চলের বহু সড়ক ও বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে প্রদর্শিত ফুটেজে দেখা গেছে, সমুদ্র তীরবর্তী হলিডে অ্যাপার্টমেন্টগুলোর নিচতলা লাল মাটিতে চাপা পড়েছে  আর পাহাড়ের ঢালের বাড়িগুলোর ভিত্তি ধুয়ে যাওয়ায় সেগুলো বিপজ্জনকভাবে ঝুলে আছে।

নদীর পাড় ধরে গড়ে ওঠা বস্তিগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল। বহু খুপড়ি ঘর পানিতে ভেসে গেছে অথবা কাদা ও আবর্জনার নিচে চাপ পড়েছে।

পানি নেমে যাওয়ার পরও জরুরি বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। একটি স্কুলে আটকা পড়া বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উদ্ধারের অপেক্ষা ছিলেন।

অঞ্চলটি প্রায় ১০০ স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত ও ৫০০ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

ডারবানের মেয়র কাউন্ডা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পানি শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শহরের অধিকাংশ এলাকাই বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন রয়েছে।

সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে আভাস দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া বিভাগ।