ক্যাটাগরি

ধর্মঘট উঠলেও ট্রেনের সূচি আর টিকেট বিড়ম্বনায় নাজেহাল

ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল বুধবার সকাল ৬টা ২০
মিনিটে, কিন্তু রেল শ্রমিকদের ধর্মঘটে তা আটকে যায়। দুপুরের দিকে ধর্মঘট
প্রত্যাহার হলে বেলা ২টার খানিক আগে ট্রেনটি গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী
সমিতির ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি দেশে। আর তাতে স্টেশনে
এসে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

বেলা ১২টার পর মন্ত্রীর আশ্বাসে সেই ধর্মঘট তুলে
নেন আন্দোলনকারীরা, কিন্তু এরপর শুরু হয় সূচি বিড়ম্বনা।

ঢাকার কমলাপুরে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন সবুজ
ইসলাম নামের এক যাত্রী। সিলেট যাওয়ার জন্য দুদিন আগে পারাবতের টিকেট কেটেছেন।
কিন্তু ট্রেন বন্ধের খবর শুনে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সবুজ বলেন, “বন্ধুরা
মিলে আজকে সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। সকালবেলা এখানে এসে শুনলাম ট্রেন চলবে না।
ভেবেছিলাম টিকিট ফেরত দেব। তাও দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। দেরিতে হলেও ট্রেন
চলাচল শুরু হয়েছে। এখন কিছুটা স্বস্তি লাগছে।”

সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী
টিকিটের টাকা ফেরত নেন। কিন্তু বাঁধাধরা সময়ে কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবেন, তা নিয়ে
পড়েন বিড়ম্বনায়।

আবার দুপুরে ট্রেন চলাচল শুরুর ঘোষণায় ফের তারা
বিপাকে পড়েন। টিকিট ফেরত দেওয়া অনেক যাত্রীই আবার টিকিট কেটেছেন।

ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুভানা তাবাসসুম
স্টেশনে এসেছেন তার মা এবং ছোটবোনকে সঙ্গে নিয়ে। সকাল ১০টায় একতা এক্সপ্রেসে জয়পুরহাট
যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু স্টেশনে এসে ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর পেয়ে টিকিট ফেরত
দেন।

তার পরপরই খবর আসে, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর
আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। কিন্তু একতা এক্সপ্রেস কখন ছাড়বে, কিংবা অন্য কোনো
ট্রেনে তারা যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে পড়েন বিভ্রান্তিতে।

সুভানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন
তো ট্রেন আবার চলছে। কিন্তু সকাল ১০টার ট্রেন কখন ছাড়বে, অন্য কোন ট্রেন যাবে,
টিকেট পাব কিনা- এই নিয়ে একটা সমস্যায় পড়েছি। আগে তো টিকিটের টাকা রিফান্ড
করেছিলাম।”

দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন
ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রানিং ট্রেন
কর্মচারীদের দাবি পূরণের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং
রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কর্মচারীরা
সবাই যার যার কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। সারা দেশে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।”

কিন্তু ততক্ষণে কমলাপুর স্টেশনে ১৭টি ট্রেনের যাত্রা আটকে গেছে। কর্তৃপক্ষ সেগুলো ধীরে
ধীরে ছাড়ার পরিকল্পনা নিলেও কখন কোন ট্রেন ছাড়বে তা জানতে না পারায় যাত্রীরা পড়েন বিভ্রান্তিতে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, “যে
ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন আমরা আগে পাব, সেই ট্রেনটিই আগে যাবে। আশা করছি আগামীকালকের
(বৃহস্পতিবার) মধ্যে সবগুলো ট্রেনের ইঞ্জিন চালু হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, “ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী
ফেরত যাওয়ার কারণে যাত্রীসংখ্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যেহেতু ট্রেন চলাচল শুরু
হয়েছে, যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যাবে।”

যারা আগাম কাটা টিকেট ফেরত দিয়েছেন, তারা আবার
নতুন করে টিকেট পাবেন কিনা জানতে চাইলে রেলের এই কর্মকর্তা বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই
যারা দেখেছেন গন্তব্যে যেতে দেরি হচ্ছে, তারা টিকিটের টাকা ফেরত নিয়েছেন। এখন
ট্রেনের টিকিট আবার এভেইলেবল হয়েছে। চাইলেই কাউন্টার থেকে যাত্রীরা এসে টিকেট
কাটতে পারবেন।”

বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্তও কমলাপুর রেল স্টেশনের
টিকিট কাউন্টারে টিকিট জমা দিয়ে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন ছিল।
রোজা রেখে ওই অবস্থার শিকার হয়ে বিড়ম্বনার কথা বলেন যাত্রীরা।

সকাল ৮টায় ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে ছেলের সঙ্গে রওনা
দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল মরিয়ম বেগমের। বেলা সাড়ে ১১
টায় তাকে বসে থাকতে দেখা যায় টিকিট কাউন্টারের কাছেই।

মরিয়ম বলেন, “ছেলেরে পাঠাইছি, সে টিকিট ফেরত
দিতে গেছে। আজকে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। রোজার মধ্যে এমন ঝামেলা হইলে ভাল্লাগে?”

জামালপুরে যাওয়ার উদ্দেশে কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলেন
ব্যবসায়ী জীবন চন্দ্র ঘোষ এবং তার পরিবার। স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে
সকাল ১০টায় জামালপুর এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল। কিন্তু এসেই জানতে পারেন, ট্রেন
চলছে না। এরপর পড়ে যান বিড়ম্বনায়।

বেলা পৌনে ১২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
জীবন বলেন, “আজকে যেভাবেই হোক যাওয়া লাগবে। ট্রেন চলছে না। কখন যেতে পারব জানি না।
এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। টিকিটের টাকা ফেরত নেব কিনা, সেটা নিয়েও বিভ্রান্তিতে
আছি।”

লোকো মাস্টার বা ট্রেন চালক, সহকারী চালক,
ট্রেনের গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) মত যে কর্মীরা নিয়মিত ট্রেন চলাচলের
সঙ্গে যুক্ত, তাদের বলা হয় রানিং স্টাফ।

এ ধরনের কর্মীরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে
বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে এক দিনের বেতনের সমান অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ
হিসেবে পেয়ে আসছিলেন। আর অবসরে গেলে সেই ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে তাদের পেনশন হিসাব
করা হত।

বছরখানেক আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাইলেজ ও ৭৫
শতাংশের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের আন্দোলন শুরু হয়।

বুধবার ধর্মঘটের কারণে রেলমন্ত্রী ওই সুবিধা
পুনর্বহালের ঘোষণা দেন। মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনও বাতিল করা হয়।