সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলে হেরে গেছে রিয়াল। তবে প্রথম লেগের ৩-১ ব্যবধানে জয়ের সুবাদে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালে উঠেছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
ফিকে হয়ে যাওয়া আশা পুনরুজ্জীবিত করতে, লড়াইয়ে ফিরতে যেকোনো
মূল্যে গোল চাই- ম্যাচের শুরু থেকে চেলসির খেলায় ফুটে ওঠে এই মরিয়া ভাব। রিয়ালের কারো
পায়ে বল গেলেই তাকে ঘিরে ধরছিল দুই-তিন জন। তাতে প্রথম কয়েক মিনিটে তো নিজেদের অর্ধ
থেকে বের হতেই পারছিল না স্বাগতিকরা।
যে আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে তাদের মধ্যে, তার
বলেই পঞ্চদশ মিনিটে গোল আদায় করে নেয় চেলসি। দারুণ পাসিং ফুটবলে গড়া আক্রমণে রুবেন
লোফ্টাস-চিকের ফ্লিকে হাঁটুর টোকায় টিমো ভেরনার বল বাড়ান ডি-বক্সে আর ছুটে গিয়ে প্রথম
ছোঁয়ায় জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মাউন্ট।
পরের মিনিটেই পাল্টা গোলের সুযোগ পায় রিয়াল। মাঝমাঠের কাছ
থেকে বেনজেমার থ্রু বল ফাঁকায় পেয়ে দ্রুত এগিয়েও কী ভেবে গতি কমিয়ে দেন ভিনিসিউস জুনিয়র।
এরপর বাঁ দিক থেকে বক্সে ডান দিকে বাড়ালেন বল, যেখানে তার কোনো সতীর্থই ছিল না। পেছনে
হতাশা প্রকাশ করেন বেনজেমা।
৩৪তম মিনিটে অনেক দূর থেকে জোরাল শটে আরেক দফা ভীতি ছড়ান
আন্টোনিও রুডিগার। বল পোস্টের বাইরে দিয়ে গেলে হাফ ছাড়ে রিয়াল।
প্রথমার্ধের লড়াই কতটা একমুখী ছিল, তা ম্যাচ পরিসংখ্যানে
ফুটে ওঠে। গোলের উদ্দেশ্যে চেলসি সাত শট নিয়ে দুটি রাখে লক্ষ্যে, সেখানে রিয়াল তিনটি
শট নিলেও একটিও সেভাবে ভাবাতে পারেনি প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে।
বিরতির পরও রিয়াল ফিরতে পারেনি স্বরূপে। বলা যায়, তাদেরকে
জ্বলে ওঠার জায়গাই দেয়নি চেলসি। পুরো মাঠের সবখানেই যেন ছিল চেলসির খেলোয়াড়রা।
৫১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার পাশাপাশি দুই লেগ মিলিয়ে
স্কোরলাইনে সমতা টানে শিরোপাধারীরা।
গোল হতে পারতো আগের মিনিটেই, তবে রিস জেমসের বক্সের বাইরে
থেকে নেওয়া শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। বল মদ্রিচের পায়ে লেগে গিয়েছিল ভেবে কর্নার
দেন রেফারি, যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় ক্রোয়াট মিডফিল্ডারের পায়ে বল স্পর্শ করেনি। ওই
কর্নারেই দারুণ হেডে রিয়াল আরও কোঠাঠাসা করে ফেলেন রুডিগার।
পরের ছয় মিনিটে দুটি ভালো সুযোগ পায় রিয়াল। প্রথমবার বেনজেমা
ছয় গজ বক্সে বলে পা লাগাতেই পারেননি। আর দ্বিতীয়বার টনি ক্রুসের দারুণ ফ্রি কিক অসাধারণ
নৈপুণ্যে ঝাঁপিয়ে ফেরান এদুয়াঁ মঁদি।
৬২তম মিনিটে ডিফেন্ডার ফেরলঁদ মঁদির ভুলে বল পেয়ে আক্রমণে
ওঠে চেলসি। মাতেও কোভাচিচ জালে বলও পাঠান; কিন্তু আগুমহূর্তে বল তার আঙুল ছোঁয়ায় ভিএআরে
পাল্টায় সিদ্ধান্ত। সে যাত্রায় বেঁচে যায় রিয়াল।
আগের দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা বেনজেমা ৬৬তম মিনিটে গোল
পেতে পারতেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি, তার হেডে বল ক্রসবারে বাধা পায়।
শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ৭৫তম মিনিটে একক নৈপুণ্যে বের্নাবেউকে
স্তব্ধ করে দেন ভেরনার। বক্সে বল পায়ে ঢুকে প্রথমে দানি কারভাহালকে কাটিয়ে দাভিদ আলাবার
বাধা এড়িয়ে শট নেন জার্মার ফরোয়ার্ড। বল কোর্তোয়ার
গায়ে লেগে খুঁজে নেয় ঠিকানা।
ম্যাচে ৩-০, দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে এগিয়ে চেলসি। সেমি-ফাইনাল
তখন তাদের দৃষ্টিসীমানায়।
৭৮তম মিনিটে আক্রমণের ধার বাড়াতে কাসেমিরোকে তুলে রদ্রিগোকে
নামালেন আনচেলত্তি। সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক ছিল, তার প্রমাণ মিলে যায় পরের দুই মিনিট
পরই। মদ্রিচের অসাধারণ এক ক্রসে দারণ ভলিতে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
জেগে ওঠে রিয়াল, জেগে ওঠে বের্নাবেউ।
(বিস্তারিত আসছে)