কেন এমন করলেন তিনি? শিশুটির মা বলছেন, কিইভ থেকে পালানোর পথে রুশ আগ্রাসনে পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কিংবা মারা পড়লে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ার পর অন্তত তার পরিচয় যেন জানা যায়, সেজন্যই তিনি পিঠে লিখে দিয়েছেন যাবতীয় খুঁটিনাটি।
এই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শিশুটির নাম ভিরা মাকোভি। তার মা সাশা মাকোভি, ইউক্রেইনের একজন শিল্পী। বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাশা জানান, কতটা মরিয়া হয়ে ওই কাজ করেছিলেন তিনি।
মেয়ের পিঠে তার নাম, বয়স এবং কয়েকটি ফোন নম্বর লিখে দেন সাশা। তিনি বলেন, “যদি আমরা মরে যাই, আর ওকে (ভিরা) যদি খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে যেন অন্তত জানতে পারে সে কে ছিল।”ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে পালিয়ে পরিবারটি এখন ফ্রান্সে আশ্রয় নিয়েছে।
ফ্রান্সে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পর সাশা তার মেয়ের পিঠের একটি ছবি ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।
বিবিসি বেতারকে সাশা মাকোভি বলেন, ‘‘সেদিনটি ছিল যু্দ্ধের প্রথম দিন। আমরা কিইভ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আমাদের ওই যাত্রা নিরাপদ হবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।”
“আমরা যখন গোছগাছ করছিলাম তখন বোমা পড়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। আমরা খুব সামান্য তথ্যই পাচ্ছিলাম। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আমরা কোনো রকেট হামলার মধ্যে পড়ব কিনা সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। আমার সব থেকে বড় ভয় ছিল ভিরা হারিয়ে যেতে পারে, কিংবা আমরা মারা পড়তে পারি। সেরকম হলে ভিরা কখনও জানতে পারবে না সে কে এবং কোন পরিবার থেকে এসেছে।”
ছবি: শাসা মাকোভি/বিবিসি
নিজেদের মারা পড়ার আশঙ্কা করলেও মেয়ের মৃত্যুর কথা কল্পনাতেও আনতে পারেননি মাকোভি; বরং তিনি আশা করেছিলেন, তাদের কিছু হয়ে গেলেও তার মেয়ে হয়ত জীবিত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমার আশা ছিল, অন্তত ভিরা একদিন তার মায়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্ট দেখতে পারবে এবং জানতে পারবে মা দেখতে কেমন ছিল। আমি ভেবেছি, সে ইন্টারনেটে কিছু তথ্য খুঁজে পাবে, হয়ত ইন্সটাগ্রামে আমার একাউন্ট খুঁজে বের করতে পারবে এবং হয়ত সে তার বাবা-মাকে দেখতে পাবে।”
কিইভ থেকে মলদোভা, রোমানিয়া ও বেলজিয়াম হয়ে শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ফ্রান্সে পৌঁছায় মাকোভির পরিবার। প্রাণ হাতে নিয়ে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মানসিকভাবে ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়েছেন বলেও জানান এ নারী।
তিনি বলেন, যুদ্ধের সময়গুলো ছিল মারাত্মক আতঙ্কের। বাইরে শুধু একটু হাঁটতে গেলেও ভয়ে কাঁপতে হয়েছে। কারণ, তার ল্যান্ডমাইনকে পাথর ভেবে ভুল করার আশঙ্কা ছিল।
“ভিরা এখন ভালো আছে। কী ঘটছে সেটা বোঝার মত বয়স এখনও তার হয়নি। সে আমার কাছ থেকে কিছু কিছু বিষয় অনুভব করতে পারছে। কিন্তু এসব বুঝতে পারার জন্য সে এখনও অনেক ছোট। ওর বয়স কম হওয়ায় বরং আমি খুশি এবং স্বস্তিতে আছি।”