ক্যাটাগরি

‘গৎবাঁধা’ রায়, বললেন হুমায়ুন আজাদের ভাই

হুমায়ুন
আজাদের ছোটো ভাই মঞ্জুর কবির বুধবার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাঁসির রায়
হয়েছে? ওই গৎবাঁধা। যাদের ফাঁসি হল তারা আদৌ ছিল না কিনা কে জানে? যে মূল আসামি তাকেইতো
মামলায় রাখা হয়নি। প্রতিক্রিয়া দিয়ে কী হবে, ভাইতো ফিরবে না।

“যিনি
নিহত হয়েছেন, তিনি (হুমায়ুন  আজাদ) হামলায় আহত
হওয়ার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে দায়ী করেছিলেন। তাকেই যখন বাদ দেওয়া হল, তারপর তো
আর কিছু থাকে না।”

ঢাকার
চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।

দণ্ডিত
আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের
(জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল
আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বাকি
দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন
ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।

ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হয়েছিলেন একুশে বইমেলা
চলাকালে। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের
পাশ দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন তিনি।

হুমায়ুন আজাদ হত্যা: ৪ জঙ্গির ফাঁসির রায়

আক্রান্ত হুমায়ুন আজাদ: সেই রাতে যা ঘটেছিল
 

কয়েক
মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২
অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ভাষা
বিজ্ঞানী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ তার লেখার কারণেই প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী
গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৪ সালে তার ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত
হলে মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

বিএনপি-জামায়াত
জোট সরকার তখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়। আর বইটির প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ,
যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে জামায়াতে ইসলাম এ দেশে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত
হয়েছিল।

সে
সময় জামায়াতের এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যিনি পরে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন,
তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন আজাদের বইটি নিষিদ্ধেরও দাবি তুলেছিলেন।

হুমায়ুন
আজাদ সে সময় নানাভাবে সাম্প্রদায়িক হুমকি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু একুশে বইমেলার বাইরে
এভাবে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হবে, সেটা কেউ ভাবেনি।

ওই
হামলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। পরে পুলিশের তদন্তে
বেরিয়ে আসে, ইসলামি জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদের ওপর ওই হামলা চালিয়েছিল।

হামলার
পরদিন মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের আদেশে
অধিকতর তদন্তের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

যুদ্ধাপরাধী
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এ মামলার আসামি করা হলেও পরে সম্পূরক
অভিযোগপত্রে তার নাম বাদ দেওয়া হয়, যা নিয়ে পরিবারের অসন্তোষ রয়েছে।