বন্যার সংগীতকর্ম ছাড়াও তার জীবনী, দুর্লভ ছবি দিয়ে একটি ওয়েবসাইট সাজানো হচ্ছে; গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সংস্কৃত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দপ্তর বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের তত্ত্বাবধানে এ কর্মযজ্ঞ চলছে।
কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবারই প্রথম সরকারিভাবে কোনো শিল্পীর সংগীতকর্ম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অন্য আরও বরেণ্য শিল্পীর কাজ সংরক্ষণ করা হবে।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো সেটা (ভার্চুয়ালি গান সংরক্ষণ) বুঝি না, আবার পারিও না। আজকালকের ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রযুক্তি নিয়ে ধারণা রাখে, আমার সে রকম ধারণা নাই।
“সরকার এই দায়িত্ব নেওয়ায় আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে। এই যুগে এসে এটা না পারলেও পিছিয়ে যেতে হয়। আমাদের মত পুরানো শিল্পীদের গান সংরক্ষণে এটা খুব ভালো উদ্যোগ।”
জাফর রাজা চৌধুরী মাস দুয়েক আগে কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর সেই দায়িত্বে এসেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নাজরিফা শ্যামা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব নেওয়ায় ওই উদ্যোগের বিস্তারিত এখনও তার জানা হয়ে ওঠেনি।
বন্যাকে নিয়ে ওয়েবসাইট উন্নয়নে কাজ করছেন সংগীতশিল্পী ও অডিও প্রকৌশলী জুয়েল মোর্শেদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ঈদের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েবসাইটির নাম উন্মোচন করা হবে; তার আগেই যাবতীয় কাজ গুছিয়ে আনছেন তারা।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতগুলোও ওয়েবসাইটে তোলা হবে; শ্রোতারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানীর বিনিময়ে তা শুনতে পারবেন।
কপিরাইট আইন অনুযায়ী, রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার জন্য ‘রিলেটেড রাইটস’ পাবেন বন্যা; ফলে ওয়েবসাইটের গান থেকে রয়্যালিটি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন তিনি।
গান শোনার সুযোগ ছাড়াও বন্যার জীবনী ও দুর্লভ ছবির সমাহার দেখা যাবে ওয়েবসাইটে।
জুয়েল বলেন, “আমরা একটি ফটো গ্যালারি করছি, যেখানে উনার তিন বছর বয়সের ছবিও থাকবে। ওস্তাদ রবি শঙ্করের ছবিসহ বেশ কয়েকটি দুর্লভ ছবি থাকছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন, অধ্যাপক বন্যা রবীন্দ্রসংগীতের জন্য দেশে-বিদেশে খ্যাতি পেলেও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তনও গেয়েছেন।
১৯৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রংপুর জেলায় জন্ম নেওয়া বন্যা প্রথমে ছায়ানট এবং পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। সেখানে শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন ও আশীষ বন্দ্যোপাধায়ের মত সংগীতজ্ঞদের সান্নিধ্যে আসেন তিনি।
সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারার’ প্রতিষ্ঠাতা বন্যা রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন।
সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পান বন্যা।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘বঙ্গভূষণ’, ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এ শিল্পী।
এর আগে কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চুর ২৭২টি গান সংরক্ষণ করেছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস; মাঝে বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের গানও সংরক্ষণ করেছে সংস্থাটি।