ক্যাটাগরি

বিশ্ব জুড়ে কোভিড শনাক্ত ৫০ কোটি ছাড়িয়েছে

দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই মহামারী এ বছর কয়েকটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে: এবছর জানুয়ারির শুরুতে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা ৩০ কোটি, ফেব্রুয়ারির শুরুতে সেই সংখ্যা ৪০ কোটি এবং মঙ্গলবার তা ৫০ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

তবে নিশ্চিতভাবেই আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। প্রায় আটশ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছে যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা না করায় শনাক্তের তালিকায় তাদের নাম যোগ হয়নি।

এই প্রবণতাকে বিপজ্জনক বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের মহামারী বিশেষজ্ঞ আলি মোকদাদ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যদি আপনি পরীক্ষা না করেন, তাহলে আপনি জানতে পারবেন না ভাইরাসের কোন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কর্মকর্তারা সম্প্রতি আফ্রিকার দেশগুলোকে কোভিড পরীক্ষা এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া, আমেরিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশকে টিকাদান এবং পরীক্ষার গতি দ্বিগুণ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

ইউরোপের দেশগুলোতেও এখনও সংক্রমণ বাড়ছে।

ডব্লিউএইচও-র একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফ্রিকার ৬৫ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। মহাদেশটিতে ওই সময়ে শনাক্ত মোট রোগীর তুলনায় যা প্রায় শতগুণ বেশি।

তবে সারা বিশ্বেই বর্তমানে প্রতিদিনই নতুন শনাক্তের সংখ্যা কমছে। গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে গড়ে প্রতিদিন ১১ লাখের মত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে এসেছে। গত সপ্তাহে বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটাও দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কম।

শনাক্ত এবং মৃত্যু হ্রাস পেলেও বিশ্ব এখনও মহামারীর তীব্র পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন ডব্লিউএইচও-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যতই সতর্কবার্তা দিন না কেন, অনেক দেশ এখন মহামারীর বিস্তার রোধে আরোপিত নানা বিধি নিষেধ তুলে নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গণস্বাস্থ্যের জন্য নতুন যে দিকনির্দেশনা দিযেছে সেখানে বলা হয়, বেশিরভাগ আমেরিকানের মাস্ক পরার আর দরকার নেই। তাদের সামাজিক দূরত্বও মানতে হবে না বা বদ্ধ জায়গায় জনসমাগমেও বাধা নেই।

মোকদাদ বলেন, ‘‘বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটছে? মানুষজন কী হতাশ হয়ে পড়ছেন? তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন?”

মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার এই মরিয়া ইচ্ছার কারণেই ওমিক্রনের উপধরন বিএ.২ বিশ্বজুড়ে রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ার হুমকি দিচ্ছে। বিএ.২ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করোনাভাইরাসের সব থেকে দ্রুত সংক্রামক ধরন।

বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রে এখন নতুন যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাদের অধিকাংশ ভাইরাসের এই ধরনে সংক্রমিত হয়েছেন।

করোনভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে মানুষের হাতে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র টিকা। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এর ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ প্রকল্পের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৫১০ কোটি মানুষ করোনাভাইরাসের অন্তত এক ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন; যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

তাছাড়া, ১৭০ কোটির বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। কিন্তু টিকা প্রাপ্তির এ হার সব মহাদেশে একরকম নয়। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ টিকার অন্তত একটি ডোজ পেয়েছেন।