সম্প্রতি বালক ও বালিকা বিভাগে মনোনীত খেলোয়াড়দের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে ক্রীড়া অধিদপ্তর। এক মাসের এই প্রশিক্ষণে ১১ জন বালিকা ফুটবলার (অনূর্ধ্ব-১৭) মনোনীত হয়েছেন।
আর সেই তালিকায় বাজিমাত করা রংপুরের চার মেয়ে নাসরিন আক্তার, মৌরাশি আক্তার, শাম্মি আক্তার ও রেখা আক্তার; তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ১৮ এর মধ্যে। চারজনই একই গ্রামের বাসিন্দা এবং এতদিন খেলেছেনও সদ্যপুস্করিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবে।
চার নারী ফুটবলারাই পালিচড়ার সদ্যপুস্করিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের খোলোয়াড়
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গত বছর অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (বালিকা, অনূর্ধ্ব-১৭) খেলায় ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ওই চার নারী খোলোয়াড় অংশ নেন।
সেখান থেকে বাছাই হয়ে তারা চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) দুই মাসের নিবিড় প্রশিক্ষণে থাকেন।
পর্তুগালে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত খেলোয়াড় নাসরীন বলেন, “আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা পর্তুগালে যাচ্ছি, আমাদের রংপুর জেলার মধ্যে আমরা একই গ্রামের একই ইউনিয়েনর চারজন একসঙ্গে মাঠে প্র্যাকটিস করেছি, একই সঙ্গে চারজনই যেতে পারছি।
চার নারী ফুটবলারের সাফল্যে আনন্দে ভাসছে পরিবার ও গ্রামবাসী
“ক্রীড়া অধিদ্প্তর থেকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণের জন্য বাইরের দেশে পাঠানো হচ্ছে যাতে আমরা ভালো কিছু শিখতে পারি; বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারি।”
সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়নের চার নারী ফুটবলার বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হওয়াকে ‘বড় সাফল্য’ উল্লেখ করে আনন্দে দিশেহারা গ্রামবাসী।
তাদের সাফল্যে আনন্দিত ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, সদ্যপুস্করিনীর মেয়েরা ফুটবলে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, অতীতেও অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে।
গ্রামের ক্লাবের প্রশংসা করে পতুর্গালে সুযোগ পাওয়ায় এক খোলোয়াড়ের অভিভাবক রেজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বলেন, “মুই বিশ্বাস করব্যার পারোছো না, মোর বেটি ঢাকাত খেলবার গেইছে। ফির স্যাটে থাকি বিদেশোতও যাবার সুযোগ পাইছে। গ্রামোত ক্লাব না থাকলে এত কিছু হইল না হয়।”
চার ফুচবলার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দুমাস
খেলোয়াড় শিলা আক্তারের বাবা গোলজার হোসেনও ভীষণ আনন্দিত।
“হামি ভীষণ আনন্দিত হামাকে আজ খুব ভালো লাগছে। হামার মেয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে জায়গা পেয়েছে। এটা তো হামাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি যে কী খুশি, তা বলে বোঝাতে পারব না।”
জেলার সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবু তৈয়ব আরিফের পৃষ্ঠপোষকতায় সদ্যপুস্করিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাব ২০২০ সাল থেকে আলোর মুখ দেখেছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে জেলার সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার এই চারজনের মধ্যে পর্তুগালে সুযোগ পাওয়া নাসরিন এবং ক্লাবেরই আরেক খোলোয়ার রুমির পায়ের লিগামেন্ট অস্ত্রোপচারও করিয়েছেন।
বাংলাদেশকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরাই লক্ষ্য, বলেন খোলোয়াড়রা
“আমাদের সফলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে” মন্তব্য করে সদ্যপুস্করিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও ফুটবল প্রশিক্ষক মিলন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এই ক্লাবের মাধ্যমে দেশে ভালোমানের খেলোয়াড় তৈরিতে ভূমিকা রাখা। সেই চেষ্টা নিয়েই দীর্ঘদিন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা প্রাশসক ও জেলা পুলিশের সহযোগিতা ক্লাব পাচ্ছে জানিয়ে সভাপতি আরও জানান, তাদের অনেক পরিকল্পনা থাকলেও পৃষ্ঠাপোষকের অভাবে সেসব বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।