তাছাড়া, আন্তর্জাতিক একটি নিরাপত্তা সংস্থার চালানো ব্যাপক-ভিত্তিক তদন্তের পর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেইনে রাশিয়া বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘পরিষ্কার নিদর্শন’ পাওয়া গেছে।
ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার (ওএসসিই) এই তদন্তকারীরা বলছেন, কিছু কিছু নৃশংসতার ঘটনা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে। ধর্র্ষণ, অপহরণ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রুশ হামলা এবং নিষিদ্ধ গোলাবারুদ ব্যবহারের বহু খবর যাচাই বাছাই করে দেখেছেন এই তদন্তকারীরা।
বুধবারেও ইউক্রেইন যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকরা এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে সেনা জড়ো করছে। ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী খারকিভে বোমা হামলা করছে, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বহু প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইউক্রেইনকে সহায়তা করেছে। বুধবার মার্কিন কর্মকর্তারা এও বলছেন যে, ইউক্রেইনকে পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার ব্যাপক হামলার মুখে প্রস্তুত রাখার জন্য তারা গোয়েন্দা সহায়তা বাড়িয়েছেন।
তাছাড়া, আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেইনকে সমর্থনের নিদর্শনস্বরূপ রাজধানী কিইভে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে পাঠানোর কথাও চিন্তা-ভাবনা করছে মার্কিন প্রশাসন।
কিন্তু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করা কঠিন এবং এর বিচার করাটা এখনও কঠিন। কোনও দেশনেতা অভিযুক্ত হওয়া বিরল এবং আসামির কাঠগড়ায় তার দাঁড়ানো আরও বিরল ব্যাপার।
তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ইউক্রেইন যুদ্ধ এই দিক থেকে ভিন্ন হতে পারে। কারণ, ক্রেমলিনের নেতাদেরকে দায়ী করার বিষয়টি গতি পাচ্ছে। রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি গত মাস থেকেই খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক একটি অপরাধ আদালত।
অন্যদিকে, আগ্রাসন চালানোর অপরাধে রাশিয়ার বিচার করতে জাতিসংঘের জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠনে সহায়তা করার উপায় খুঁজছে বেশকিছু সংখ্যক দেশ। আর বিকল্পের মধ্যে আছে, সার্বজনীন বিচারব্যবস্থার নীতিমালার আওতায় অন্যান্য দেশের আদালতে রুশদের বিচার করা।
কিছু অপরাধ এতটাই জঘন্য যে, সেটির বিচার যে কোনওখানেই করা যায়- এমন আইনগত ধারণার ভিত্তিতেই এ বিচার করার এখতিয়ার আছে। ফ্রান্সের ডজনখানেক তদন্তকারী এ সপ্তাহে তদন্তকাজে যোগ দিয়েছেন।
সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের প্রফেসর এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মানবতা বিরোধী অপরাধ বিষয়ক প্রধান কৌসুঁলির উপদেষ্টা লায়লা সাদাত বলেন, “বিচার হবে, সম্ভবত গোটা বিশ্বজুড়েই হবে। ইউক্রেইন আদতে এখন যুদ্ধাপরাধ তদস্তকারীদের সঙ্গে সামনে এগুচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা তারপরও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই প্রক্রিয়া হবে ধীরগতির। আর শুরুর দিকে কেউ অভিযুক্ত হলে তা হতে পারে নিম্নস্তরের রুশ কর্মকতারা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রাশিয়া বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অলীক এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করে এসেছে। তাই তারা কোনও বিচারকাজে সহায়তা করার আশা নেই।
ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা (ওএসসিই) তাদের ১১০ পাতার বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বুধবার। ভিয়েনা ভিত্তিক ৫৭ সদস্যের এই সংস্থায় আছে রাশিয়া, ইউক্রেইন এবং যুক্তরাষ্ট্রও। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এই সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর এটিই প্রথম নিবিড় তদন্ত।
এতে বলা হয়েছে, মানুষের এমনকী সবচেয়ে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুশ নিয়ন্ত্রিত জায়গাগুলোতে এই লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
ওএসসিই’র তিন বিশেষজ্ঞের সত্যানুসন্ধানী দল ২৪ ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধের শুরু থেকে ১ এপ্রিল সময়ের মধ্যে তদন্ত চালিয়ে এই প্রতিবেদন দিয়েছে।
যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যে ইউক্রেইনের নাট্যশালায় আশ্রয় নেওয়া মানুষদের ওপর রুশ হামলাসহ অবরুদ্ধ নগরী মারিউপোলের মাতৃসদন হাসপাতালে হামলার মতো ঘটনাও আছে। এই দুটি হামলার ঘটনাকেই যুদ্ধাপরাধের সামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
তবে ওএসসিই-তে ক্রেমলিনের নিজস্ব তদন্ত দল এই প্রতিবেদনের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।