চাষিদের দাবি, সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় তারা ন্যায্যা মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অনেকে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় মাঠের লবণ মাঠেই ফেলে রেখেছেন।
টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপের লবণ চাষি আব্দুল হামিদ।
সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় নেই ন্যায্য দাম, অভিযোগ চাষিদের
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, ‘হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় খুবই দুশ্চিন্তায়’ আছেন তিনি।
“এক মণ লবণ বিক্রি করে এখন চার কেজি চালও পাওয়া যাচ্ছে না।”
একই বক্তব্য ওই এলাকার আরও অনেক লবণ চাষির।
শাহ পরীর দ্বীপের জাহেদ উল্লাহ, মো. সিদ্দিক, নয়াপাড়ার মো. শরীফ, সালাম, হাফেজ উল্লাহ, মো. সেলিমসহ অনেকে জানিয়েছেন, তারা কেউ ৩০ হাজার মণ, কেউ ৫০ বা ৭০ বা ২০ হাজার মণ লবণ উৎপাদন করেছেন।
চাষিদের দাবি, উৎপাদন যত বেশি হচ্ছে, লবণের দামও তত কম
জাহেদ উল্লাহ বলেন, “বর্তমানে প্রতিমণ লবণ ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজারে এক কেজি প্যাকেটজাত লবণের দাম ৩০-৪০ টাকা।”
এ অবস্থা চলতে থাকলে চাষিরা ‘চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন’ বলে উৎকণ্ঠার কথা জানান সাবরাংয়ের চাষি মোহাম্মদ শরীফ।
তিনি বলেন, “বলতে গেলে পানির দামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না লবণ। প্রতি একরে লবণমাঠে খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন লবণ বিক্রি করে একর প্রতি ২০ হাজার টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না।”
অবিক্রিত লবণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে টেকনাফে
চাষিদের অভিযোগ, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে মাঠপর্যায়ের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই এখন উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়াও দায়ী করেছেন সিন্ডিকেটকে।
তিনি বলেন, “মাঠজুড়ে বড় বড় স্তূপ করে হাজার হাজার মণ লবণ মাঠেই ফেলে রাখা হয়েছে। সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
“লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছে না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবেন না অনেকে চাষি।”
বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় মাঠের লবণ মাঠেই ফেলে রেখেছেন চাষিরা
তবে বিসিক টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের দাবি, “গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।”
টেকনাফে এবার তিন হাজার ৯৪৫ একর জমিতে ৩৪ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
লবণ চাষ হয় যেভাবে
লবণ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন সমতল মাঠ। মাঠ পরিষ্কার করে বেড বানিয়ে কালো পলিথিন বিছানো হয় ৯৮ শতাংশ জমিতে। কালো পলিথিনে তাপমাত্রা সহজে বাড়ে। সেখানে বঙ্গোপসাগর বা নাফ নদীর লোনা পানি ঢুকিয়ে জমিয়ে রাখা হয়। সূর্যের তাপে বেডের পানি শুকিয়ে যায় আর লবণ জমে থাকে। ভালভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর চাষিরা পলিথিনের ওপর থেকে লবণ সংগ্রহ করেন।
মাঠে কালো পলিথিন বিছিয়ে চার কোনা বেড তৈরি করে তাতে লবণাক্ত পানি জমানো হয়
সরেজমিন লবণমাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সাবরাং ইউনিয়নের নয়া পাড়া, শাহপরীর দ্বীপের হাজার হাজার একর জমিতে বিশাল মাঠজুড়ে লবণের চাষ হচ্ছে।