শ্রীলঙ্কার ঋণমান তলানিতে নামিয়ে এনে ফিচ
রেটিং বলেছে, দেশটির সরকারের খেলাপি হওয়ার পথে। একই ধরনের ঘোষণা দিয়ে এস অ্যান্ড পি
গ্লোবাল রেটিংস বলেছে, শ্রীলঙ্কা যে খেলাপি হতে যাচ্ছে, তা এখন ‘দৃশ্যমানভাবেই নিশ্চিত’।
বিবিসি লিখেছে, বিদেশি ঋণের কিছু কিস্তি
যে আপাতত শোধ করা যাচ্ছে না, এ সপ্তাহেই তা স্বীকার করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। দক্ষিণ
এশিয়ার এই দ্বীপ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসায় তৈরি হয়েছে এ সঙ্কট।
শ্রীলঙ্কাকে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডের
সুদ বাবদ ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার (৭৮ মিলিয়ন ডলার) পরিশোধ করতে হবে সোমবার। ৩০ দিন সময়ের
মধ্যে তা পরিশোধ করা না গেলে প্রথমবারের মত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবে ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ
শাসন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটি।
ঋণ জর্জরিত শ্রীলঙ্কা ডলারের অভাবে তেল কিনতে
পারছে না। জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। দেশেজুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
খাদ্য ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে
আসছে এসব পণ্যের মজুদ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাতে বড় ভূমিকা
রেখেছে শ্রীলঙ্কার রুপির অবমূল্যায়ন।
সংকট মোকাবিলায় দেশটির সরকার প্রবাসী নাগরিকদের
আরও অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর বুধবার আর্থিক সাহায্য
হিসেবে মার্কিন, ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ইউরো পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, “এই অর্থ সাহায্য কেবল খাদ্য,
ওষুধ ও জ্বালানির মধ্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যবহার করা হবে।”
ফিচের সর্বশেষ রেটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ‘খেলাপি
পর্যায়ের কাছাকাছি’ রাখা হয়েছে, সংস্থাটি বলেছে, শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ‘অপরিবর্তনীয়ভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।
“কোনো একটি ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় পার
হয়ে গেলে বা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আমরা তাদের এই রেটিং কমিয়ে আনব,” এক বিবৃবিতে
বলেছে ফিচ।
আর এসঅ্যান্ডপি বলেছে, শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন
পরিকল্পনা কী, বা তারা নিশ্চিতভাবেই দাতাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে কি না, সেই তথ্য
পেলেই রেটিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। তবে তাদের ধারণা, শ্রীলঙ্কা সরকার বন্ড
কুপন (সুদ) পরিশোধ করতে পারবে না।
গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে, আপাতত
৩ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ তারা শোধ করতে পারছে না।
আর দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস
মহামারীর প্রভাব এবং ইউক্রেইন যুদ্ধ তাদের এই ঋণ পরিশোধকে অসম্ভব করে তুলেছে।
দেশের অর্থনীতিকে পথে ফেরানোর চেষ্টায় নতুন
ঋণ পাওয়ার জন্য আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বসবে শ্রীলঙ্কার
কর্তৃপক্ষ। সম্ভাব্য সেই বেলই আউট আলোচনার আগে শ্রীলঙ্কার মুদ্রা রুপির মানের ব্যাপক
পড়ক ঘটেছে।