ক্যাটাগরি

জাহাঙ্গীরনগরে বর্ষবরণের বর্ণিল প্রস্তুতি

করোনা ভাইরাস মহামারীতে
দীর্ঘ দুবছর বন্ধ থাকার পর এবার বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে বর্ণিল আয়োজন করছে জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

‘মানুষে মানুষে সম্প্রীতি
বয়ে যাক, প্রকৃতি ও প্রত্যয়ে এসো বৈশাখ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের আয়োজন করতে
যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখ উৎযাপন কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন চারুকলা বিভাগের
সভাপতি ফারহানা তাবাসসুম।

তিনি বলেন, “পহেলা
বৈশাখের আয়োজন মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে করা হয়েছে। চারুকলা বিভাগ সেখানে
মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্ব নিয়েছে। আমাদের কাজ প্রায় শেষ; শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রচুর
পরিশ্রম করেছেন। দুবছর পর আবার পহেলা বৈশাখ উৎযাপন হবে এটা ভেবে আমরা উচ্ছ্বসিত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন
কলা ভবনের সামনে পুরোদমে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পহেলা বৈশাখের একদিন আগে পুরাতন
কলা ভবনের সামনে ঘুরে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে।

ভবনের সামনেই বিশালাকার
ময়ূর ও সাপের কাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত কয়েকজন।

জিজ্ঞেস করলে চারুকলা
বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর কর্মকার বলেন, “এবারের পহেলা বৈশাখের ‘মোটিফ’ দুটি। একটি হলো
এই ময়ূর-সাপ অন্যটি মাছ।”

“বাংলা লোকজ সমাজে
এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যেখানে ময়ূর থাকে সেখানে সাপ প্রবেশ করে না। এখানে সাপ
হলো অভিশাপের প্রতীক আর ময়ূর আশীর্বাদের। যেহেতু করোনা আমাদের জন্য এক অভিশাপ সেহেতু
এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতেই মূলত এই ময়ূর-সাপের মোটিফ ধারণ করা হয়েছে।”

পুরাতন কলা ভবনের ভিতরে
ঢুকতেই দেখা যায় ‘নববর্ষ হাট ১৪২৯’ নিয়ে বসেছে চারুকলার একদল শিক্ষার্থী। সেখানে বিক্রি
হচ্ছে বিভিন্ন রঙের মুখোশ, নকশা করা মাটির সরা। এছাড়া কাগজে কাটা ফুল-পাখিও বিক্রি
করছে তারা।

আরেকটু ভিতরে ঢুকতেই
দেখা যায় বিশালাকৃতির মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এবারের দুটি মেটিফের একটি হচ্ছে এই মাছ।

মোটিফ হিসেবে কেন মাছ
রাখা হয়েছে জানতে চাইলে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব হোসেন বলেন, “এবারের বৈশাখে
যে মোটিফ ধারণ করা হয়েছে তার ভিতর একটি ফোক মাছ। ফোক মাছ মূলত উর্বরতার প্রতীক, প্রজন্মের
প্রতীক। ধরার সমস্ত গ্লানি মুছে ধরায় উর্বরতা ছড়িয়ে পড়ুক – এই মিথ থেকেই মূলত এই ভাবনা।”

চারুকলা বিভাগের ক্লাসরুম
গুলোতে ঘুরে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মুখোশ
কাটছেন, কেউ সেটায় রং করছেন; অনেকে মাটির পতিল বা সরায় নকশা করছেন। তাদেরই একজন চারুকলার
শিক্ষার্থী হুমায়রা হিয়া।

তিনি বলেন, “আমরা সকলে
মিলে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, পরিশ্রম করছি; এটা সত্যিই আনন্দের। করোনার কারণে গত দুই
বছর ক্যাম্পাসে বৈশাখ উৎযাপন  বন্ধ ছিল। দুবছর
পর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করতে পারাটা সত্যিই আনন্দের।”

কর্তৃপক্ষের কর্মসূচি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত
নিবন্ধক রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখ ১৪২৯ উৎযাপন সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে
স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টা
থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুভেচ্ছা বিনিমিয়।

পৌনে ৯টায় কর্তৃপক্ষের
উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, অফিস, হল, জাবি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী,
ছাত্র-ছাত্রী এবং মহিলা ক্লাব ও ক্যাম্পাসবাসীর অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ
অনুষদ ভবন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে।

সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়
মহুয়া তলায় বাংলা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে
সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের
যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।

তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগও
এককভাবে এবারের পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এককভাবে
পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের জন্য অনুষ্ঠান করবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

বিধি-নিষেধ

নিবন্ধক স্বাক্ষরিত
বিজ্ঞপ্তিতে এবারের পহেলা বৈশাখে কিছু বিধি-নিষেধও রাখা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে:

#    পহেলা বৈশাখ ১৪২৯ তারিখে দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মোটরসাইকেল
ব্যতীত ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল প্রবেশ/চলাচল বন্ধ থাকবে।

#    ওই দিন বহিরাগত গাড়ি প্রবেশ/চলাচল সীমিত রাখা হবে এবং কেন্দ্রীয় মসজিদের
পশ্চিমে এবং জাবি স্কুল ও কলেজের মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে।

#    এ বছর নববর্ষের প্রতিপাদ্য: ‘মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বয়ে যাক, প্রকৃতি
ও প্রত্যয়ে এসো বৈশাখ’ ব্যানারে লেখার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আনন্দ শোভাযাত্রার
একটি মাত্র ব্যানার থাকবে। কবে কুলা, ডালা ইত্যাদিতে প্রতিপাদ্য লিখে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ
করা যাবে।

#    পহেলা বৈশাখে কোনও রং ছিটানো যাবে না। কেউ রং ছিটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

#    বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, হল
ও অফিস নিজ নিজ উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের কর্মসূচি পালন করবে।

#    ঢাকা শহরে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যাম্পাসে
আসা যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা হবে। বাস প্রচলিত রুটে ছেড়ে আসবে।