চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহের দশটি আন্তঃনগর
ট্রেন ছাড়ে প্রতিদিন, মেইল ট্রেন ছাড়ে দুইটি। কিন্তু বুধবার দুটি আন্তঃনগরসহ চারটি
ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়েছে। বাকি ট্রেনগুলোর বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ছেড়েছে নির্ধারিত
সময়ের অনেক পরে।
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ডাকে এই ট্রেন
ধর্মঘটের কারণে সারা দেশের মত চট্টগ্রামেও বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। কিন্তু তার জেরে যাত্রীদের ভুগতে হয়েছে দিনভর।
দুপুরে ঢাকায় রেলমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর বেলা সাড়ে
১২টার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সমিতির নেতারা। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে।
অনেক আসন খালি রেখে আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ওই সময়
ঢাকার পথে ছেড়ে যায়। অথচ সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে বেলা ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে
যাওয়ার কথা ছিল ওই ট্রেনের যাত্রীদের।
পেনশন থেকে মাইলেজ ভাতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রেলকর্মীদের ধর্মঘটের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম স্টেশনে অনেক যাত্রী এসে ফিরে যান বুধবার। ছবি: সুমন বাবু
পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনসার আলী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধর্মঘট ওঠার পর সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রথম ছেড়ে যায়।
পরে আরও বেশ কয়েকটি বিলম্বিত ট্রেন স্টেশন ছাড়ে।
তবে ময়মনসিংহগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস, সিলেটগামী
আন্তঃনগর পাহাড়িকা, চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস এবং ঢাকাগামী কর্ণফুলী মেইলের যাত্রা
বাতিল করতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব ট্রেনের যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া
হয়েছে।”
পূর্ব রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস
৩টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম ছাড়ে। এ ট্রোন ছাড়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৮টায়।
ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস দুপুর সাড়ে ১২টার বদলে ছেড়েছে
বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে। মহানগর গোধূলী বেলা ৩টার জায়গায় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম
ছেড়েছে ।
তবে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে
বিকাল ৫টাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে পেরেছে। রাতে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা এক্সপ্রেস,
সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস এবং ঢাকাগামী ঢাকা মেইলও নির্ধারিত সূচিতে ছাড়ার কথা রয়েছে
বলে রেল কর্মকর্তারা জানান।
বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ধর্মঘট ওঠার
পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের লোকাল ট্রেনও চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী
শাটল ট্রেন, নাজিরহাট ও দোহাজারীমুখী কমিউটার ট্রেন ছেড়ে গেছে।
ধর্মঘটের বিষয়টি আগে না জানায় সকালে স্টেশনে এসে বিপাকে
পড়েন যাত্রীরা। কেউ কেউ টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে বাসায় গেলেও অনেককে ট্রোনের আশায়
দীর্ঘ সময় প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এর জের চলে বিকালেও।
রেলেওয়ে একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, আন্তঃনগর বা মেইল ট্রেনগুলো জোড়া হিসেবে প্রতিদিন চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের রেকটি ঢাকায় না পৌঁছালে সেখানের সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি পুনরায় সঠিক
সময়ে চট্টগ্রামের পথে রওনা দিতে পারবে না।
“সারোদেশে ধর্মঘটের কারণে ট্রেনের শিডিউল ওলট-পালট
হয়ে গেছে। এটি পুরোপুরি ঠিক হতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”
রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী অবশ্য আশা করছেন,
বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ট্রেনের সূচি অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে।
পেনশন থেকে মাইলেজ ভাতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বুধবার সকালে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলকর্মীরা। দুপুরে রেলমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ধর্মঘট তুলে নেয়। ছবি: সুমন বাবু
ধর্মঘট
কাদের এবং কেন?
লোকো মাস্টার বা ট্রেন চালক, সহকারী চালক, ট্রেনের
গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) মত যে কর্মীরা নিয়মিত ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত,
তাদের বলা হয় রানিং স্টাফ । বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফের ১৭৪২টি পদ থাকলেও বর্তমানে
১০১৩ জন কর্মরত।
এ ধরনের কর্মীরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বা ১০০
মাইলের বেশি ট্রেন চালালে এক দিনের বেতনের সমান অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ হিসেবে পান।
আর অবসরে গেলে সেই ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে তাদের পেনশন হিসাব করা হত আগে।
বছরখানেক আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাইলেজ ও ৭৫ শতাংশের
সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের আন্দোলন শুরু হয়। রেলের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ আন্দোলনে
নামলে মাইলেজ পুর্বহাল হয়। পেনশন সুবিধা ‘পরে দেখা হবে’ বলে সে সময় আশ্বাস দিয়েছিল
রেল কর্তৃপক্ষ। তা পূরণ না হওয়ায় সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দেয় এ সংগঠন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমসি