নিহত তাসফিয়া আক্তার জান্নাতের খালু হুমায়ুন কবির বাদী বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয় এবং তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাজীপুর গ্রামে বুধবার একদল যুবকের গুলিতে তাসফিয়া আক্তার জান্নাত (৪) নিহত হয়; আহত হন তার সৌদি আরব প্রবাসী বাবা আবু জাহের।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, মামলার এজাহারে পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের রিমন, মহিন, রহিম, আকবর, সুজনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা হলেন লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নূর নবীর ছেলে এমাম হোসেন স্বপন, লতিফপুরের সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবর ও দেলওয়ার হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন।
ওসি জানান, এই তিনজনকে বুধবার রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে আটক করা হয়। পরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জন্মের ৪ বছর পর প্রথম বাবাকে দেখে তাসফিয়া
তাসফিয়ার স্বজনরা জানান, তার জন্মের সময় বাবা আবু জাহের সৌদি আরব ছিলেন। এর মধ্যে তিনি আর দেশে আসেননি। তাই বাবাকে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত ছিলে চার বছরের এই শিশু। সব সময় বাবার সঙ্গেই কাটছিল তার সময়।
বুধবার বিকাল ৩টায় বাবার সঙ্গে পাশের মামুনের দোকানে চকলেট কিনতে গিয়েছিল তাসফিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি মামুনের ভাষ্য, পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের রিমন, মহিন, রহিম, আকবর, সুজনসহ ১৫-২০ জনের একটি দল তার দোকানে আসে। তারা আবু জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে প্রথমে এক রাউন্ড গুলি করে। ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে মেয়েটিকে [তাসফিয়া] ইট দিয়ে আঘাত করে।
“এক পর্যায়ে তারা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় পিছন থেকে এক বন্দুকধারী ফের দুই রাউন্ড গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু জাহের ও মেয়ে তাসফিয়া লুটিয়ে পড়ে।”
মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। তবে তাসপিয়ার বাবা এই মাটি কেনা-বেচায় যুক্ত নন।
স্থানীয়রা জানান, জমির মাটি কাটা নিয়ে আবু জাহেরের বাড়ির এক ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজনের বিরোধ রয়েছে। এই ঘটনায় সালিশ-বিচারও হয়েছে। ওই সালিশে তাসকিয়ার বাবার আবু জাহের উপস্থিত ছিলেন। সে কারণে হামলাকারীরা আবু জাহেরের উপর ক্ষুব্ধ ছিল।
হামলাকারীরা গুলি করার সময় সেই ঘটনার উল্লেখ করেছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলিতে তাসফিয়ার মাথাসহ পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেছে। ঢাকায় নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। গুলিতে আবু জাহেরের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত তাসফিয়ার মরদেহ বাড়ি নেওয়া হলে স্বজন ও এলাকাবাসী প্রায় এক ঘণ্টা চৌমুহনী-ফেনী সড়কের সোরেগো পুল অবরোধ এবং হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার বিচার দাবি করে।
ওসি জাহেদুল হক রনি জানান, এ সময় সড়কে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। পরে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।