মহামারীর অমঙ্গলে বাঙালির সার্বজনীন বর্ষবরণ উৎসব দুবছর ছিল ফিকে, বৃহস্পতিবারের সূর্য জানাল, সে এসেছে নতুন বারতা নিয়ে।
নারী-পুরুষের রঙিন সাজে, শিশুর মুখে ফুটে ওঠা আনন্দের হাসি আর বর্ণিল পোশাকে, কপোলে আঁকা আলপনায়, ছায়ানটের গানে আর শোভাযাত্রার মুখোশে, টেপা পুতুলে- বঙ্গাব্দ ১৪২৯ কে বরণ করে নেওয়ার পালা।
বৈশাখের প্রথম সকালে বৃহস্পতিবার রমনা বটমূলে গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হয় রাগালাপের মধ্য দিয়ে। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগো মঙ্গল লোকে’।
পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে সংস্কৃতিকর্মীরা গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। এই সংগঠনের উদ্যোগেই ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে হয় প্রথম বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
এবার ৮৫ জন শিল্পীর পরিবেশনায় বৈশাখী আয়োজন সাজিয়েছে ছায়ানট। গান ও আবৃত্তিসহ তাতে ছিল মোট ৩৭টি পরিবেশনা।
দুই বছর পর উৎসবের এই দিনে কাক ডাকা ভোরে দলবেঁধে মানুষ ছুটেছে রমনায়, সেই মহামারীর আগের দিনগুলোর মত।
ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। নগরে বৈশাখ বরণের এই অনুষঙ্গেও জড়িয়ে আছে এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক সংগ্রাম।
স্বাধীনতার পর সেনা শাসনে নিষ্পেষিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে গত শতকের ৮০ এর দশকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
বৈশাখের প্রথম সকালে বৃহস্পতিবার রমনা বটমূলে গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
মহামারীর খাঁড়া এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও নেমেছিল। ২০২০ সালে হয়নি, ২০২১ সালে শুধু প্রতীকীভাবে এই শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল।
এবার স্বাভাবিক সময়ের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হলেও এর গতিপথে পরিবর্তন এসেছে মেট্রো রেলের কাজের জন্য শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়ক ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে চলে আসা এই শোভাযাত্রা এবার সকাল ৯টায় শুরু হবে টিএসসি থেকে, তবে শাহবাগের দিকে না এসে যাবে নীলক্ষেতের দিকে। তার আগে উপাচার্য ভবন চত্বর ঘুরে টিএসসিতে ফিরে শেষ হবে এই কর্মসূচি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলায় সংগীত বিভাগের আয়োজনে বৈশাখের কোনো আয়োজন এবার থাকছে না। ধানমণ্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বৈশাখ বরণের আয়োজনও এবার হবে না।
তবে রাজধানীতে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বর্ষবরণের আয়োজন থাকছে।
বৈশাখের প্রথম সকালে বৃহস্পতিবার রমনা বটমূলে গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ছায়ানটের শিল্পীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দেশজুড়ে কুইজ প্রতিযোগিতা (নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হবে; সুসজ্জিত করা হবে নববর্ষের ব্যানার, ফেস্টুনে।
এবার রোজার মধ্যে সব ধরনের আয়োজন দুপুরের মধ্যে শেষ করতে বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বাদে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলার তৈরি মুখোশ হাতে রাখা যাবে। ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা না বাজানো ও বিক্রি না করতে বলা হয়েছে।