ক্যাটাগরি

মিঠুনের দারুণ সেঞ্চুরিকে ছাপিয়ে আবাহনীর জয়

সেই ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়েতে একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন মিঠুন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার একমাত্র সেঞ্চুরি ছিল এটিই। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে আরেকটি শতরান তিনি উপহার দিলেন বটে। তবে প্রায় একার লড়াইয়ে জেতাতে পারলেন না দলকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা প্রত্যাশী দুই দলের লড়াইয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ২৮ রানে হারাল আবাহনী লিমিটেড।

জয়-পরাজয়ের ব্যবধান বেশ স্পষ্টই। তবে মিঠুন আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচ ছিল দোদুল্যম্যান। শেষ তিন ওভারে প্রাইম ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল ৩৭ রান। মিঠুন যেভাবে খেলছিলেন, তাদের জয় অসম্ভব ছিল না মোটেও। মিঠুন আউট হতে সম্ভাবনাও শেষ। আবাহনীরও তা জানা বলেই তাদের উল্লাস ছিল বাঁধনহারা।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আবাহনী ৫০ ওভারে তোলে ২৭১ রান। প্রাইম ব্যাংক ১১ বল বাকি থাকতে অলআউট ২৪৩ রানে।

এই ম্যাচের আগে ৯ ম্যাচে ৬ জয়ে দুই দলেরই ছিল সমান ১২ পয়েন্ট। এই জয়ে আবাহনীর পয়েন্ট এখন ১৪। ৯ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।

দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত ক্রিকেটাররা যোগ দেওয়ায় প্রিমিয়ার লিগের লড়াই নতুন মাত্রা পায় এ দিন। দেশে ফেরার পরদিনই মাঠে নেমে যান লিটন দাস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান জয়রা। ভালো করতে পারেননি অবশ্য তাদের কেউই।

আবাহনী ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। জাকের আলিকে সঙ্গে নিয়ে জয় শুরুটা করেছিলেন ভালোই। তবে ইনিংস বড় করতে পারেনি কেউই। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের স্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্টের হাতে তুলে দেন জয় (১৯ বলে ২১)।

লিটন তিনে নেমে জুটি গড়ে তোলেন জাকের আলির সঙ্গে। দুজন বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু দুজনই আউট হন থিতু হয়ে। জয়ের মতোই রকিবুলের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দেন জাকের।

লিটন মুহূর্তের অমনযোগিতায় উইকেট বিলিয়ে আসেন অদ্ভুতভাবে। শেখ মেহেদি হাসানের বলে প্যাডল সুইপ করেই তিনি রান নিতে এগিয়ে যান কয়েক পদক্ষেপ। খেয়ালই করেননি, বল কিপারের হাতেই! কিপার মিঠুন মুহূর্তেই উড়িয়ে দেন বেলস।

এই দুজনের মতো আবাহনীর পরের ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেনও আউট হন থিতু হয়ে। কাকতালীয়ভাবে, তিনজনই ফেরেন ৩০ রান করে!

ম্যাচ শেষে প্রাইম ব্যাংকের মুমিনুল হক অভিনন্দন জানাচ্ছেন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেককে।

ম্যাচ শেষে প্রাইম ব্যাংকের মুমিনুল হক অভিনন্দন জানাচ্ছেন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেককে।

হনুমা বিহারি ও মোসাদ্দেক হোসেন সেখান থেকে টেনে নেন দলকে। পঞ্চম উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।

এই জুটি ভাঙে মোসাদ্দেকের রান আউটে। দ্রুত সিঙ্গেলের চেষ্টায় রুবেল হোসেনের সরাসরি থ্রোয়ে আউট হন তিনি ৫৬ বলে ৪০ রান করে। আউট নিয়ে যদিও আপত্তি দেখান তিনি। তবে ভিডিও দেখে তাকে আউট বলেই মনে হয়েছে। যদিও খুবই ‘ক্লোজ কল’ ছিল, যা খালি চোখে তাৎক্ষনিক মাঠে দেখা আম্পায়ারদের জন্য কঠিনই।

এরপর শামীম হোসেনের আগ্রাসী কিছু শটে বাড়ে রানের গতি। মেহেদিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ৭৪ বলে ৫৮ করে বোল্ড হন বিহারি। দুটি চার ও তিনটি ছক্কায় শামীম করেন ২৭ বলে ৩৫।

শেষ দিকে সাইফ উদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে দুটি ছক্কা। নান্দনিক শটে ইনিংসের শেষ বলেও মারেন তিনি ছক্কা।

রান তাড়ায় প্রাইম ব্যাংকের শুরুটা হয় যাচ্ছেতাই। প্রথম দুই বলেই হারায় তারা দুই উইকেট! সাইফ উদ্দিন আবাহনীকে এনে দেন দুর্দান্ত শুরু।

এবারের লিগে অসাধারণ ফর্মে থাকা এনামুল হক আউট হয়ে যান ইনিংসের প্রথম বলেই। শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করে ক্যাচ তুলে দেন তিনি পয়েন্টে। পরের বলেই ভারতীয় অভিমন্যু ইশ্বরন উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে।

শূন্য রানে দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ওপেনার শাহাদাত হোসেন ও চারে নামা মুমিনুল হক। তবে রানের গতি যায় প্রায় থমকে। জুটিও খুব বড় হয়নি।

৩৪ বলে ১৫ করে মুমিনুল বোল্ড হন মোসাদ্দেকের বলে। শাহাদাত অনেকক্ষণ উইকেটে থেকেও ছন্দ পাননি ততটা। তার ইনিংস শেষ হয় ৬৪ বলে ৩৯ রান করে। এরপর টিকতে পারেননি নাসির হোসেনও।

ম্যাচে তখন কেবল আবাহনীরই দাপট। নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে প্রাইম ব্যাংক। কিন্তু মিঠুন হাল ছাড়েননি। একটু একটু করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।

তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন শেখ মেহেদি হাসান ও নাহিদুল ইসলাম। তবে তারাও পারেননি লম্বা সময় টিকতে। আরাফাত সানিকে টানা দুই বলে বাউন্ডারির পর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন মেহেদি। আউট হয়ে প্রবল আক্রোশে ছুঁড়ে মারেন তিনি ব্যাট। মাটিতে গোত্তা খেয়ে অনেক দূরে আছড়ে পড়ে ব্যাট। নাহিদুল ফেরেন ২২ বলে ২৪ করে।

সাইফের বলে বাউন্ডারিতে মিঠুন ফিফটি করে ৬৯ বলে। সেখান থেকে সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে বল খেলেন স্রেফ ২৭টি। ছক্কা মারেন ৫টি! 

তিনি যতক্ষণ টিকে ছিলেন, প্রাইম ব্যাংকের আশাও টিকে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষটা হয় তার হতাশায়ই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (জয় ২২, জাকের ৩০, লিটন ৩০, আফিফ ৩০, বিহারি ৫৮, মোসাদ্দেক ৪০, শামীম ৩৬, সাইফ ১৪*, তানভির ০*; নাহিদুল ১০-০-৫০-১, রুবেল ৮-০-৫৯-০, রকিবুল ১০-০-৩০-২, রেজাউর ৭-০-৩৭-০, মুমিনুল ৪-০-৩১-০, শেখ মেহেদি ৮-০-৪০-৩, নাসির ৩-০-১৮-০)

প্রাইম ব্যাংক: ৪৮.১ ওভারে ২৪৩ (এনামুল ০, শাহাদাত ৩৯, ইশ্বরন ০, মুমিনুল ১৫, মিঠুন ১০৩, নাসির ৭, শেখ মেহেদি ১৯, নাহিদুল ২৪, রেজাউর ১৬, রকিবুল ১৪, রুবেল ১*; সাইফ ১০-১-৩৯-২, তানজিম ১০-০-৪৮-২, মোসাদ্দেক ৯-০-৪৩-২, সানি ১০-০-৫৬-১, তানভির ১০-০-৫৫-২) 

ফল: আবাহনী লিমিটেড ২৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন