‘ডায়েট’ শব্দটা শুনলেই মনে হয়, হয়ত খেতে
হবে কম অথবা বাদ দিতে হবে মুখরোচক যত খাবার। অথচ বিষয়টা তা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্মার্ট ফিটনেস রেজাল্ট’য়ের
কর্ণধার স্টিভ থিউনিসেন বলেন, “ডায়েটে যাওয়ার পরিবর্তে, খাওয়ার ধরণ পরিবর্তন করার
চেষ্টা করা উচিত।”
ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
তিনি আরও বলেন, “চর্বি কমানোর সময় কেবল পেট না সারা শরীর থেকেই চর্বি কমে। উরু, বাহু,
কোমড় এমনকি মুখেও তার প্রভাব পড়ে।”
দ্রুত ফলাফল পেতে তিনি উপবাসের পরামর্শ
দেন। এতে দ্রুত চর্বি কমে ফলে পেটের মেদও হ্রাস পায়।
সঠিক নাস্তা:
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালে নাস্তা করা আবশ্যক, এমন প্রচলিত ধারণা সম্প্রতি করা গবেষণায়
প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক পুষ্টিবিদই মনে করেন,
সকালে নাস্তা করাই নয় বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘দ্য জিম গোট’য়ের ‘স্ট্রেইন্থ
অ্যান্ড কন্ডিশনিং’ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ রেডা এলমার্ডি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যারা
সকালে উচ্চ আঁশযুক্ত নাস্তা করেন তাদের ওজন নাস্তা করেন না এমন ব্যক্তিদের তুলনায় কম
থাকেন।”
আরেকটি খাবার যা পেটের চর্বি প্রতিরোধ
করে তা হল প্রোটিন।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল
রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’য়ে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া’র
করা গবেষণায় দুটি সাধারণ প্রাতঃরাশের তুলনা করা হয়েছে।
চিনি, দুধ এবং কমলার রসের সঙ্গে ডিম এবং
টোস্ট বনাম তুষের সিরিয়াল। দুই ধরণের সকালের নাস্তা একই দলের ৫০ জন স্থূলকায় কিন্তু
সুস্থ ব্যক্তিদের দুটি ভিন্ন দিনে খাওয়ানো হয়।
ফলাফলে দেখা গেছে, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। অংশগ্রহণকারীরাদের মধ্যে যারা ডিমসহ নাস্তা করেছিল তারা অন্য
দলের তুলনায় দুপুর ও রাতে কম খাবার গ্রহণ করেছিল।
ক্ষুধা চিহ্নিত করা: পেটের মেদ কমানোর আরেকটি সহজ উপায় হল ক্ষুধা ও তৃষ্ণার পার্থক্য করতে পারা।
নিউ জার্সির ‘নিউট্রিশন বাই বার্জার’য়ের
‘পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম’ বিশেষজ্ঞ বেস বার্জার বলেন, “৭৫ শতাংশ মানুষ ক্ষুধা ও
তৃষ্ণার পার্থক্য করতে পারেন না। মানে পিপাসা পেলেও ক্ষুধা ভেবে ভুল করেন এবং বাড়তি
খাবার গ্রহণ করেন।”
ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া: ঘরে খাবার তৈরি করা হলে তা স্বাস্থ্যকর হয় অন্যদিকে বাইরের খাবার
মানেই হল বাড়তি ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেইট, চর্বি ও সোডিয়ামের মতো অস্বাস্থ্যকর উপাদান
দেহে গ্রহণ করা।
এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবার, পরিশোধিত
তেল, চিপ্স, কুকি ও অন্যান্য সংরক্ষকযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরের ক্ষতি করে।
অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা: অ্যালকোহল গ্রহণ করা পেট সমতল রাখতে সহায়তা করে।
ক্যানসাসের ‘ফিটনেস ক্লোন’য়ের পুষ্টিবিদ
জুলিয়ান ট্যামায়ো বলেন, “নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করা দ্রুত চর্বিতে পরিণত হয় ও পেটে
মেদ হিসেবে জমা বাঁধে।”
সঠিক মেনু পরিকল্পনা: প্রতিটা মানুষই আলাদা। তাই প্রত্যেকের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসও
ভিন্ন। তবে কিছু বিষয় বরাবরই এক থাকে বলে জানান, পুষ্টিবিদ জোহানা বার্ডিওস।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পুষ্টিবিদের মতে,
“ওজন কমাতে ধীরে, নিয়মিত এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।”
এক্ষেত্রে, নিবন্ধিত পুষ্টিবিদের সহায়তা
গ্রহণ করা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দেবে বলে জানান তিনি।
রঙিন খাবার: বার্ডেওসের
মতে, “খাবারের প্লেট অর্ধেকটা পুষ্টিকর ফল ও সবজি দিয়ে পূর্ণ করা উচিত। এগুলো পুষ্টি
সরবারহ করার পাশাপাশি ওজন কমাতে সহায়তা করে।”
“ফল ও সবজি কম ক্যালরি সমৃদ্ধ। যা পেট
ভরা রাখে এবং বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের চাহিদা কমায়”, বলেন যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য গবেষণা
গবেষণা সংঠন ‘দ্যা ফার ইন্সটিটিউট’য়ের পুষ্টিবিদ ড্যানিয়েল বোয়ার।
তার মতে, “অতিরিক্ত খনিজ-সমৃদ্ধ খাবার,
আদা এবং লেবু বিপাক বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যালরির ঘাটতি তৈরি করে। যা সঠিক ওজন ব্যবস্থাপনায়
সহায়তা করে।”
শ্বেতসারহীন সবজি গ্রহণ: যুক্তরাষ্ট্রের ‘হেল্থ-ক্যানাল’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ব্ল্যাঙ্কা
গার্সিয়া বলেন, “যদি প্রতিটি খাবার এবং প্রতিটি নাস্তায় শ্বেতসার বিহীন শাকসবজি খাওয়ার
অভ্যাস করা যায় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঁশ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং শরীরের চর্বি
কমবে।।” আঁ
“আঁশ হল একটি জটিল কার্বোহাইড্রেইট যা
হজম হয় না এবং শোষিত হয় না। এটি অন্ত্রের ঝাড়ু হিসেবে কাজ করে।”
এটা শরীরকে সমস্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন
এবং চর্বি শোষণ করতে দেয় না। ফলে পেটে মেদ কম জমে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই ধরনের সবজির মধ্যে রয়েছে- ব্রকলি,
শসা, শুঁটি, বেগুন, কপি, গাজর, মাশরুম, টমেটো ইত্যাদি।
আরও পড়ুন