ক্যাটাগরি

বৈশাখের রঙ ফেরার পালা

করোনাভাইরাস মহামারীর হানায় বর্ষবরণের এই সার্বজনীন উৎসব হয়ে পড়েছিল ফিকে, দুই বছর বাদে এবার তার রঙ ফেরার অপেক্ষায় সবাই।

নিষ্প্রাণ সেই সময় পেরিয়ে আবার জমে ওঠার অপেক্ষায় রমনার বটমূল, ‘নব আনন্দে জাগো’র প্রত্যয়ে। বর্ণিল হবে মঙ্গল শোভাযাত্রাও, সব মালিন্য দূর করার আবাহনে।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, এখন বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গাব্দ ১৪২৯ কে বরণ করে নেওয়ার পালা, উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষা।

সেই উৎসবে শামিল হয়ে ধর্ম-বর্ণসহ সব বিভেদ ঘুচিয়ে এক হয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান এসেছে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছ থেকে।

বটমূল-মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাণ ফিরছে বৈশাখে
 

পঞ্জিকার পাতা উল্টে ১৪২৮ থেকে ১৪২৯ আসা সাধারণ একটি ঘটনা হলেও বাঙালির জীবনে এই সাধারণ ঘটনার শুরুই হয় ভিন্ন মাত্রা নিয়ে।

কৃষি উৎসব বা রাজস্ব আদায়ের বিষয় হিসেবে বৈশাখকে সামনে এনে বাংলা সাল প্রবর্তনের পর বাঙলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন প্রভাবিত করলেও তা রাজনৈতিক হয়ে ওঠে পাকিস্তান শাসনামলে।

পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খানের আমলে যখন বাঙালির বাঙালিয়ানা নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়, তখন এই বর্ষবরণ উৎসব হয়ে উঠেছিল বাঙালির আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার রাজনৈতিক হাতিয়ার।

তখন ছায়ানট সংস্কৃতি কেন্দ্র রমনার বটমূলে প্রতিবাদী উচ্চারণে বর্ষবরণের যে আয়োজন করেছিল, তা হয়ে ওঠে নগরে এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ।

মহামারী কারণে গত দুই বছর বাংলা নববর্ষের সকালে এমন সুনসান ছিল রমনা বটমূল।

মহামারী কারণে গত দুই বছর বাংলা নববর্ষের সকালে এমন সুনসান ছিল রমনা বটমূল।

কোভিড মহামারীর কারণে গত দুই বছর রমনার বটমূল ছিল সুনসান, এবার চেনা আয়োজন নিয়ে ফিরছে ছায়ানট। মহামারীর বিপযয় কাটিয়ে তারা এবার আয়োজনের শিরোনাম দিয়েছে- ‘নব আনন্দে জাগো’।

১৪২৯ সালের প্রথম সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৬টায় রাগালাপ ও গানে শুরু হবে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। 

প্রতিবারের আয়োজনে ১২৫ জনের মতো শিল্পী এ আয়োজনে অংশ নেন; মহামারীর মধ্যে এবার স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি বিবেচনা করে সেই সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই বছর পর আমরা এটি করতে পারছি বলে খুবই আনন্দিত। অনুষ্ঠানের সময়টাও সামান্য একটু কমে আসবে। তাছাড়া সকলেরই প্রবল উৎসাহ আছে। অনেকদিন পর এমন আনন্দ-আয়োজনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।”

ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। নগরে বৈশাখ বরণের এই অনুষঙ্গেও জড়িয়ে আছে এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক সংগ্রাম।

স্বাধীনতার পর সেনা শাসনে নিষ্পেষিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে গত শতকের ৮০ এর দশকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।

মহামারীর খাঁড়া এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও নেমেছিল। ২০২০ সালে হয়নি, ২০২১ সালে শুধু প্রতীকীভাবে এই শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল।

এবার স্বাভাবিক সময়ের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হলেও এর গতিপথে পরিবর্তন এসেছে মেট্রো রেলের কাজের জন্য শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়ক ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে চলে আসা এই শোভাযাত্রা এবার সকাল ৯টায় শুরু হবে টিএসসি থেকে, তবে শাহবাগের দিকে না এসে যাবে নীলক্ষেতের দিকে। তার আগে উপাচার্য ভবন চত্বর ঘুরে টিএসসিতে ফিরে শেষ হবে এই কর্মসূচি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তৈরি করা হচ্ছে নানা ধরনের মুখোশ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এসব মুখোশেই ফুটে উঠবে বিচিত্র সব চরিত্র। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তৈরি করা হচ্ছে নানা ধরনের মুখোশ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এসব মুখোশেই ফুটে উঠবে বিচিত্র সব চরিত্র। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

গতিপথ বদলে মঙ্গল শোভাযাত্রা বলবে এবার ‘অগ্রগতির’ কথাও
 

রজনী কান্ত সেনের গান থেকে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।

শোভাযাত্রার মূল সুর নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের প্রতিপাদ্য অনেকটা প্রার্থনা সঙ্গীতের মতো।

“অতিমারীর কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দটি হারিয়ে গিয়েছিল। পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জীবন। সেই স্বাভাবিকতা ধরে রাখার প্রত্যাশায় এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হয়েছে ‘নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।”

মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের শিল্পকাঠামোয়ও থাকছে প্রতিপাদ্য অনুসরণ করে সুসময়ের বিশেষ বার্তা।

আয়োজকরা বলছেন, এবারের শোভাযাত্রায় টেপা পুতুল, মাছ, পাখি ও ঘোড়া চারটি বিশালাকৃতির শিল্পকাঠামো বা মোটিফ দেখা যাবে। সঙ্গে থাকবে পুষ্পাকৃতির বিশাল চরকি।

চারুকলার ২৬তম ব্যাচের অঙ্কন ও চিত্রাংকন বিভাগের শিক্ষার্থী সীমান্ত ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মোটিফ ব্যাখ্যায় বলেন, “ফুল ও পাখির সমন্বয়ে একটি বড় ফোক মোটিফ থাকবে। এই প্রতীকটা অনেক আগে গ্রাম্য মেলাগুলোতে বিক্রি করা হত। এখন সচারাচর দেখা যায় না। এবার ব্যতিক্রম হিসেবে এই স্ট্রাকচারটা তৈরি করা হচ্ছে।

“পাখি ও ফুল নিয়ে যে স্ট্রাকচারটা, যেখানে তিনটি সার্কেলে তিনটি পাখি, মাঝখানে থাকবে ফুল। উপরের বড় পাখিটা আমাদের একধরনের মুক্তির প্রতীক। বিশালাকারের পাখিটি অতীতের গ্লানি মুছে দিয়ে বলবে অনাগত সুদিনের কথা। ফুল সেখানে নান্দনিকতা ছড়াবে।”

শোভাযাত্রার শিল্পকাঠামোয়ও থাকছে সুসময়ের বিশেষ বার্তা।

শোভাযাত্রার শিল্পকাঠামোয়ও থাকছে সুসময়ের বিশেষ বার্তা।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় কারও অংশ নিতে মানা না থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারী বিবেচনায় নিয়ে জনসমাগম সীমিত রাখার অনুরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলায় সংগীত বিভাগের আয়োজনে বৈশাখের কোনো আয়োজন এবার থাকছে না। ধানমণ্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বৈশাখ বরণের আয়োজনও এবার হবে না।

এবার রোজার মধ্যে সব ধরনের আয়োজন দুপুরের মধ্যে শেষ করতে বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবার নিরাপত্তা জোরদারের কথাও বলেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

তিনি মঙ্গলবার রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু বন্ধু রাষ্ট্র জঙ্গিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দিচ্ছে। উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু রেডিক্যালাইজড সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করছি। সেকারণেই আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা।”

দুই দশক আগে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে হয়েছিল বোমা হামলা। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলে আঘাত হানতে মৌলবাদী গোষ্ঠী সেই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

জীবনের নতুন স্বাভাবিক ছন্দকে স্বাগত জানান হবে ঐতিহ্যের মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে

জীবনের নতুন স্বাভাবিক ছন্দকে স্বাগত জানান হবে ঐতিহ্যের মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে

এবার বর্ষবরণে রাজধানীতে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়োজন থাকছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দেশজুড়ে কুইজ প্রতিযোগিতা (নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হবে; সুসজ্জিত করা হবে নববর্ষের ব্যানার, ফেস্টুনে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (অনুষ্ঠান) এ জে এম আব্দুল্যাহেল বাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবার সব ধরনের আয়োজন থাকছে; তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

নববর্ষ উপলক্ষে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি এবার উৎসবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।

ধর্মে-ধর্মে বিভেদ থাকবে না, এমন দেশ গড়তে হবে: শেখ হাসিনা
 

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 এক বাণীতে রাষ্ট্র্রপতি পহেলা বৈশাখকে ‘বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ’ অভিহিত করে বলেন, “বৈশাখ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার প্রেরণা। বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চিড় ধরাতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি সামরিক সরকার বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনসহ সকল গণমুখী সংস্কৃতির অনুশীলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত ভেদাভেদ ভুলে নববর্ষ উদ্‌যাপনে এক কাতারে শামিল হন।”

এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, “চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।”

বৈশাখী উৎসবের রাজনৈতিক গুরুত্বের কথা তুলে ধরে আলাদা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশাখ আমাদের নিয়ে যায় অবারিতভাবে বেড়ে ওঠার বাতায়নে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে, অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।”

সংস্কৃতি ও রাজনীতির মিলিত স্রোতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

গত দুই বছর ঘরবন্দি বৈশাখ উদযাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে সবাইকে আজ নব-আনন্দে জেগে ওঠার উদাত্ত আহ্বান জানাই।”

নগরে বর্ষবরণ উৎসবের বড় অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন বুধবার তার শেষ সময়ের প্রস্তুতির খোঁজ-খজর নিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

নগরে বর্ষবরণ উৎসবের বড় অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন বুধবার তার শেষ সময়ের প্রস্তুতির খোঁজ-খজর নিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

নিরাপত্তা

বৈশাখ বরণের সব অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে আকাশপথসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

বুধবার রমনা বটমূল পরিদর্শনের পর বাহিনীর প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষ যেন তাদের সকল উৎসব সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য র‌্যাবসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে। সমন্বয় করে কাজ হচ্ছে।”

গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে থেকে (বুধবার) নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এবার আকাশ পথেও আমাদের তৎপরতা থাকবে, হেলিকপ্টারে করে টহল দেওয়া হবে।”

সব ধরনের নাশকতার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের মহাপরিচালক মামুন।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

রমনা বটমূল প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের নাশকতা হলে তা কীভাবে সামাল দেবে, পহেলা বৈশাখের দুদিন আগে মঙ্গলবার তারই মহড়া দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

রমনা বটমূল প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের নাশকতা হলে তা কীভাবে সামাল দেবে, পহেলা বৈশাখের দুদিন আগে মঙ্গলবার তারই মহড়া দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

‘বন্ধুরাষ্ট্রের তথ্যে’ রমনায় এবার বাড়তি নিরাপত্তা

বৈশাখী আয়োজন এবার দুপুরেই শেষ করতে হবে: পুলিশ
 

মঙ্গলবার রমনা বটমূলে নিরাপত্তা প্রস্তুতি ঘুরে দেখার পর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, “কোনো হামলার আশঙ্কা আমরা করছি না। যেহেতু নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে কোনো কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছি না।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, “লোন উলফ কেউ একটা ছুরি বা ব্লেড নিয়ে যদি হামলা করে, এটা তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

বরাবরের মতোই রমনার বটমূলে ঢুকতে হবে কয়েক স্তরের তল্লাশির ভেতর দিয়ে। রমনায় কেউ মুখোশ পরে ঢুকতে পারবে না।

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে পারবে না। প্রথমে তল্লাশি করে যাদের ঢোকানো হবে, তারাই শোভাযাত্রা শেষ করবে।”

রোজা চলছে বলে রমনায় কোনো খাবারের দোকান থাকবে না বলে ডিএমপি কমিশনার জানান।

নববর্ষকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি চালাচ্ছে।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, “অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে আসা মহিলাদের উত্যক্ত, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি রোধকল্পে মোবাইল কোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

র‌্যাব জানায়, তাদের সদর দপ্তরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (হটলাইন নাম্বারঃ ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

পহেলা বৈশাখের আগে মঙ্গলবার রমনা বটমূল প্রাঙ্গণে প্রতীকী বোমা নষ্ট করার মহড়ায় পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এক সদস্য। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

পহেলা বৈশাখের আগে মঙ্গলবার রমনা বটমূল প্রাঙ্গণে প্রতীকী বোমা নষ্ট করার মহড়ায় পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এক সদস্য। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মঙ্গল শোভাযাত্রা বাদে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলার তৈরি মুখোশ হাতে রাখা যাবে। ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা না বাজানো ও বিক্রি না করতে বলা হয়েছে।

নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসের সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। বিকাল ৫টার পর আর ক্যাম্পাসে ঢোকা যাবে না, কেবল ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা বের হতে পারবে।

ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।

টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক বন্ধ থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার জন্য চারুকলা অনুষদের সামনের ছবির হাটের ফটক, বাংলা একাডেমির সামনের উদ্যানের ফটক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন ফটক ব্যবহার করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট রাখা হবে।