বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে
শুক্রবার রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে ১৩ রানে হারাল
ব্রাদার্স।
এই ম্যাচ দুই দলের জন্যই
ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে জিতে প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকার লড়াইয়ে এগিয়ে গেল
ব্রাদার্স। হেরে গিয়ে প্রথম বিভাগে অবনমন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল খেলাঘরের।
ব্রাদার্সের জয়ের নায়ক
আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। পাঁচে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৭৫ বলে ৫ ছক্কা ও ৩ চারে
খেলেন ৮৮ রানের দারুণ ইনিংস। পরে বল হাতে
একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা তিনিই।
জাতীয় দলে আমিনুলের মূল
পরিচয় লেগ স্পিনার হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি খেলেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই। এবারের
লিগে আগেও তিনি ফিফটি করেছেন একটি। ত্রিশোর্ধ ইনিংস আছে আরও দুটি। তবে ম্যাচ
জেতানো ইনিংস খেলতে পারছিলেন না। এবার সেটিও করে দেখালেন ২২ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
লিগে এখনও পর্যন্ত ৯ ইনিংসে তার রান ২৭৭।
ছয় নম্বরে ৭৪ বলে ৬ চার
ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮৯ রান করেন ধীমান ঘোষ। আমিনুলের সঙ্গে তার পঞ্চম উইকেট জুটি
১৪০ রানের। সঙ্গে শ্রীলঙ্কান চতুরঙ্গার ক্যামিওতে ব্রাদার্স ৫ উইকেট হারিয়ে করে
৩০৬ রান।
তাদের ইনিংসকে ভাগ করা
যায় দুই ভাগে। প্রথম ২৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে রান ছিল কেবল ১০৭। পরের ২৫ ওভারে
স্রেফ এক উইকেট হারিয়ে তারা তোলে ১৯৯ রান!
রান তাড়ায় প্রাথমিক
বিপর্যয়ের পর প্রিতম কুমার ও সানির ফিফটিতে আশা জাগে খেলাঘরের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
পেরে ওঠেনি তারা। চার বল বাকি থাকতে অল আউট হয়ে যায় ২৯৩ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে
প্রথম ওভারে মাসুম খানকে দুটি চার মেরে শুরু করেন ইমতিয়াজ হোসেন। তবে ইনিংস টেনে
নিতে পারেননি তিনি। তার বিদায়েই ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ব্রাদার্সের। টিপু
সুলতানকে দারুণ একটি ছক্কায় ওড়ানোর এক বল পরই এলবিডব্লিউ হন নিচু হওয়া বলে (৩৮ বলে
৩০)।
শুরু থেকে রানের জন্য
সংগ্রাম করতে থাকা সাদমান ইসলাম স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ৪০ বলে ২০ রান করে। ৪টি চারে
ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুল থামেন ৪২ বলে ২৮ রানে। হোসেন আলির শর্ট
বল পুল করার চেষ্টায় বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।
মাইশুকুর রহমান টিকতে
পারেননি বেশিক্ষণ। ইনিংসের অর্ধেক পথ পেরিয়ে তখন ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল
ব্রাদার্স।
এরপরই আমিনুল ও ধীমানের
ওই জুটি। মৃতপ্রায় ইনিংস প্রাণের সঞ্চার পায় তাদের ব্যাটে। আমিনুল লিগে নিজের
দ্বিতীয় ফিফটি করেন ৬০ বলে। এরপর তার ব্যাটে বাড়ে ধার। হোসেন আলিকে ছক্কা হাঁকানোর
পর টিপুর পরপর দুই বল হাওয়ায় ভাসিয়ে সীমানার বাইরে ফেলেন তিনি।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার প্রথম
সেঞ্চুরিও মনে হচ্ছিল নাগালে। অবশ্য পরের ওভারেই তিনি বিদায় নেন ছক্কার চেষ্টায় বল
আকাশে তুলে।
৫৫ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া
ধীমান শেষ চার ওভারে ছক্কা মারেন তিনটি। সঙ্গে চতুরঙ্গার ৪ ছক্কায় ১০ বলে ৩০ রানের
সৌজন্যে তিনশ ছাড়ায় ব্রাদার্সের সংগ্রহ। তাদের জুটিতে ৬০ রান আসে স্রেফ ২৩ বলে।
লক্ষ্য তাড়ায়
হাসানুজ্জামানের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় খেলাঘর। ৩ ওভারেই আসে ৩৯ রান। পরের ওভারে
পিনাক ঘোষকে ফিরিয়ে ৪১ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন সাকলাইন সজিব। সোহাগ গাজী দ্রুত
এলবিডব্লিউ করে দেন অমিত মজুমদারকে।
সাকলাইন পরে নিজের পরপর
দুই ওভারে ফিরিয়ে দেন হাসানুজ্জামান ও সালমান হোসেনকে। ২৮ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায়
হাসানুজ্জামান করেন ৩৯ রান।
অমিত হাসান খেলছিলেন
দারুণ। তার ৪৬ বলে ৪৬ রানের ইনিংস থামান আমিনুল। তখন ১৩৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে
খেলাঘর।
সেখান থেকে সানির সঙ্গে
৭২ বলে ৭৭ রানের জুটিতে দলকে লড়াইয়ে রাখেন প্রিতম। দারুণ খেলতে থাকা এই
ব্যাটসম্যান বিদায় নেন আশরাফুলের বলে স্টাম্পড হয়ে। ৭৪ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায়
তিনি করেন ৭২ রান।
এরপর মাসুম খান রান আউট
হয়ে গেলে ইফতেখার সাজ্জাদকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান সানি। ফিফটি করেন তিনি ৫৫ বলে।
চতুরঙ্গাকে যখন চার
মারলেন সানি, ১৩ বলে
খেলাঘরের দরকার ১৮ রান। কিন্তু শ্রীলঙ্কান স্পিনারের পরের বলেই সানির (৬৬ বলে ৬২)
বিদায়ে দলের আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায়।
পরের ওভারে হোসেন আলিকে
ফিরতি ক্যাচে বিদায় করে ইনিংসে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন সাকলাইন। আর শেষ ওভারে
ইফতেখারকে (২৮) বোল্ড করে ব্রাদার্সের জয় নিশ্চিত করে আবু হায়দার।
১০ ম্যাচে ১ জয় ৯ হারে
২ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে থেকে প্রাথমিক পর্ব শেষ করল খেলাঘর। তাদের সঙ্গে ৩ দলের
রেলিগেলশন লিগে খেলবে ব্রাদার্স ও সিটি ক্লাব। ব্রাদার্স ও সিটির পয়েন্ট ৬ করে।
রেলিগেশন লিগ থেকে একটি
দল নেমে যাবে প্রথম বিভাগে।
সংক্ষিপ্ত
স্কোর:
ব্রাদার্স
ইউনিয়ন: ৫০
ওভারে ৩০৬/৫ (ইমতিয়াজ ৩০, সাদমান ২০, আশরাফুল
২৮, মাইশুকুর ৯, আমিনুল ৮৮, ধীমান ৮৯*, চতুরঙ্গা ৩০*; মাসুম
৯-০-৭৩-১, টিপু ১০-০-৫৫-১, ইফতেখার
৮-১-২৩-১, হোসেন ৯-০-৭১-২, ইলিয়াস
৮-১৩১-০, সালমান ৬-০-৪৯-০)
খেলাঘর
সমাজ কল্যাণ সমিতি: ৪৯.২
ওভারে ২৯৩ (পিনাক ১৬, হাসানুজ্জামান ৩৯, অমিত মজুমদার ৫, অমিত হাসান ৪৬, সালমান ৫, প্রিতম ৭২, ইলিয়াস
৫৮, মাসুম ১৫, ইফতেখার ২৮, হোসেন ০, টিপু ১*; আবু হায়দার
৮.২-০-৬৮-১, চতুরঙ্গা ৮-০-৪৬-১, সাকলাইন
১০-০-৫৩-৪, সোহাগ ৭-০-৪৬-১, ইফরান ১-০-১৩-০,
আমিনুল ৯-০-৩৯-১, আশরাফুল ৬-০-২৭-১)
ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ১৩ রানে জয়ী
ম্যান
অব দা ম্যাচ: আমিনুল
ইসলাম বিপ্লব।