ক্যাটাগরি

সব হারিয়ে জিতল মোহামেডান

আগের দিন রূপগঞ্জ
টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের জয়ের পরই নিশ্চিত হয়ে যায় সুপার সিক্স পর্বে থাকছে না মোহামেডান।
শিরোপা লড়াইয়ে সেভাবে না থাকলেও সেরা ছয় দলের পর্বে নিয়মিতই ছিল তারা। সেই ধারায় ছেদ
পড়ল এবার।

বিকেএসপির তিন নম্বর
মাঠে শুক্রবার লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৮০ রানে হারিয়েছে মোহামেডান। ৩০৮ রানের লক্ষ্য
দিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা থামিয়ে দিয়েছে ২২৭ রানে।

১০ ম্যাচে পাঁচটি
করে জয়-পরাজয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ৭ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল মোহামেডান। সমান পয়েন্ট
হলেও ‘হেড টু হেড’
এর হিসেবে এগিয়ে থাকায় সেরা ছয়ে জায়গা করে নিয়েছে রূপগঞ্জ টাইগার্স
ক্রিকেট ক্লাব ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। প্রাথমিক পর্বে এই দুই দলের বিপক্ষেই হেরেছিল
মোহামেডান।

মোহামেডানের বড় পুঁজি
গড়ার পথে ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৯১ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন মেন্ডিস। পাকিস্তানের অভিজ্ঞ
ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ প্রথমবার ঢাকা লিগ খেলতে এসে ছিলেন ব্যর্থ। তার বদলে মাঠে
নেমে দ্বিতীয় ম্যাচেই সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে সেরার পুরস্কার জিতে নিলেন এই শ্রীলঙ্কান
ব‍্যাটসম‍্যান।

ইনিংস শুরু করতে
নেমে ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৬৮ বলে ৭৬ রান করেন পারভেজ হোসেন। ব্যাটিংয়ের যে ধরনের জন্য
তাকে আলাদা মনে করা হয়, সেই আগ্রাসী রূপে ছিলেন তিনি।

ভালো শুরু পেয়েও
বড় ইনিংস খেলতে না পারা মাহমুদউল্লাহ করেন আসরে নিজের প্রথম ফিফটি। ৪ ছক্কা ও ৫ চারে
৪৭ বলে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস।

বল হাতে আলো ছড়িয়ে
৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন নাজমুল অপু। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে যা তার তৃতীয় পাঁচ উইকেট।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে
নেমে রনি তালুকদার ও পারভেজের ব্যাটে শুরুটা ভালোই হয় মোহামেডানের। ৩১ রান করা রনিকে
এলবিডব্লিউ করে ৫৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

সেখান থেকে দলকে
টেনে নেন পারভেজ ও মেন্ডিস। তাদের ১১৫ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় মোহামেডান।
তাদের প্রতিরোধ ভাঙে ৫২ বলে ফিফটি করা পারভেজের বিদায়ে।

আসরে নিজের প্রথম
ম্যাচেই ফিফটি করেছিলেন পারভেজ। এরপর বাদ পড়েন রান খরায়। আবার দলে ফিরে আরেকটি পঞ্চাশ
ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তিনি।

ব্যাট হাতে আবারও
ব্যর্থ চারে নামা সৌম্য সরকার। টানা তিন ইনিংসে যেতে পারলেন না দুই অঙ্কে। এরপর জমে
ওঠে মাহমুদউল্লাহ ও মেন্ডিসের জুটি। আল আমিন হোসেনকে ছক্কায় উড়িয়ে ৫২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ
করেন মেন্ডিস। পরের বলেই অভিজ্ঞ এই পেসারকে মারেন চার।

ফিফটির পর রান তোলার
গতি বাড়িয়ে দেন তিনি। নাঈম ইসলামকে টানা তিন বলে মারেন দুই চার ও এক ছক্কা। দারুণ খেলতে
থাকা মেন্ডিস কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ৮৯ বলে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যা তার তৃতীয়। পরে লেগ স্পিনার তানবীর
হায়দারের বলে হাঁটু গেড়ে মারতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ।

আরেক প্রান্তে আগ্রাসী
ব্যাটিংয়ে রূপগঞ্জের বোলারদের নাকাল করে ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। নাবিল সামাদকে এক ওভারে
মারেন তিন ছক্কা। ২৪ বলে পা রাখেন ফিফটিতে।

এরপর আসা-যাওয়ার
মধ্যে ছিলেন মোহামেডানের ব্যাটসম্যানরা। শেষ ৭ উইকেট হারায় তারা স্রেফ ৫০ রানে। এক
প্রান্ত আগলে রেখে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাহমুদউল্লাহ।

রূপগঞ্জের হয়ে ৫০
রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদি হাসান রানা।

রান তাড়ায় তৃতীয়
বলেই শুভাগত হোম চৌধুরির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তানজিদ হাসান। এক ওভারে জোড়া শিকার
ধরেন নাজমুল অপু। তার বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হন চিরাগ জানি ও রকিবুল হাসান।

নাজমুল অপুকে ফিরতি
ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইরফান শুক্কুর। শুভাগত স্টাম্প এলোমেলো করে দেন সাব্বির রহমানের।
টিকতে পারেননি তানবীরও।

১০২ রানে ৬ উইকেট
হারিয়ে বড় হারের শঙ্কায় তখন রূপগঞ্জ। উইকেটে গিয়ে ঝড় তোলেন মাশরাফি। মুখোমুখি হওয়া
দ্বিতীয় বলেই শুভাগতকে ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খোলেন তিনি।

পরে রুবেল মিয়াকে
মারেন টানা দুই ছয়। সোহরাওয়ার্দী শুভকে হাঁকান একটি করে ছক্কা ও চার। নাজমুল অপুকে
ছক্কা মারার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে শেষ হয় মাশরাফির ৪ ছক্কা ও এক চারে ১৬ বলে
৩০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।

মেহেদি হাসান রানাকে
ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাজমুল অপু।

শেষ উইকেট জুটিতে
আল আমিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান নাঈম। দলের হয়ে একমাত্র ফিফটি আসে তার ব্যাট থেকে,
৯৩ বলে। দুইজনে গড়েন ৫৯ রানের জুটি।

শেষ ব্যাটসম্যান
হিসেবে নাঈম আউট হন ৮ চারে ৮০ রানের ইনিংস খেলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৭.৫ ওভারে ৩০৭ (রনি ৩১, পারভেজ ৭৬, মেন্ডিস ১০১, সৌম্য ২, মাহমুদউল্লাহ
৭০, মজিদ ৫, রুবেল ০, শুভাগত ১, সোহরাওয়ার্দী ৮, নাজমুল অপু ১, মাহমুদ ০*; নাবিল ৮-০-৫৯-১,
আল আমিন ৫-০-৩৪-০, মেহেদি রানা ৭.৫-০-৫০-৪, মাশরাফি ৮-০-৪৬-১, নাঈম ৯-০-৫৩-০, চিরাগ
৫-০-৩৫-১, তানভীর ৫-০-২৪-২)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৯.১ ওভারে ২২৭ (তানজিদ ১, রকিবুল ৩৩, চিরাগ ১২, নাঈম ৮০, ইরফান শুক্কুর
৭, সাব্বির ২১, তানভীর ২, মাশরাফি ৩০, মেহেদি রানা ৩, নাবিল ৬, আল আমিন ১৮*; শুভাগত
১০-০-৫৩-২, সোহরাওয়ার্দী ৯-০-৪৪-১, নাজমুল অপু ১০-২-৩৫-৫, মাহমুদ ৭-০-২৪-০, রুবেল ৬-০-৩২-১,
সৌম্য ৬.১-০-২৮-১, রনি ১-০-৯-০)

ফল:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৮০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ:
কুসল মেন্ডিস