ক্যাটাগরি

সরকারি জমি ব্যাংকে দিয়ে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জমির বিরোধে একটি হত্যা চেষ্টার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জালিয়াতির ওই ঘটনা বেরিয়ে আসে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, গোলাম ফারুক (৫০) ও ফিরোজ আল মামুন (৩৫)। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, সম্প্রতি ঢাকার মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল সংক্রান্ত বিরোধে একটি হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। ২৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল এক ভুক্তভোগীকে নিজের জমি থেকে উৎখাত করতে হামলা চালায় ফারুক ও মামুন।

ওই ঘটনায় মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তারের পর জমি সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে র‌্যাবের তদন্তে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বাড্ডায় ‘হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে’ তথ্য দিয়েছেন বলে জানান খন্দকার মঈন।

তিনি বলেন, “প্রতারণার মাধ্যমে মহাসড়কের জমি কেনাবেচার করে তা ব্যাংকে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়েও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

“কয়েকটি সরকারি অফিসের অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি তারা ব্যক্তি মালিকায় নিবন্ধন করে নেয়। যদিও এসব জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এল. এ কেস ১৩-১৯৪৮/৪৯ সালের মূলে ও পুনরায় ৬৬-১৯৫৭/৫৮ সালের মূলে অধিগ্রহণ করা হয়।”

গোলাম ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মঈন বলেন, তিনি ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসাবে ব্যবসা শুরু করেন। এজন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকী সম্পত্তি ছাড়াই এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন।

“ব্যাংকের টাকার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাংকটি আমদানিকৃত গাড়ি বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে সাত কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়।”

আল মঈন বলেন, “পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ দিলে তিনি সরকারি জমিকে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করে।

“পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের একটি জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন তিনি। জমিটি ১৯৪৮ সালে সরকার অধিগ্রহণ করে। ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই জমির একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন তিনি। ওই দলিলমূলে মালিকের ছেলের কাছ থেকে ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে নামমাত্র মূল্যে জমিটি কিনে নিয়ে আরেকটি দলিল তৈরি করেন।”

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “ওই জামি আবার স্ত্রীর কাছ থেকে ফারুক নিজের নামে দলিল করে নেন, যার সাফ কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০। পরে সেই জমি ওই বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক রেখে তিনি আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন।

“কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে বন্ধকী জমি নিলামে বিক্রি করতে নোটিস জারি করে ব্যাংক। পরে কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, তা সরকারি সম্পত্তি।”

পরে ফারুক জালিয়াতির মাধ্যমে একটি ভুল সংশোধন দলিল করে আগের বন্ধক দেওয়া জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে মেরুল বাড্ডার ওই মামলার বাদীর জমির দাগ নম্বর দিয়ে দেন। ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকী সম্পত্তির সাইনবোর্ড বসানোর চেষ্টা করলে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

গোলাম ফারুকের এসব কর্মকাণ্ডের সহযোগী হিসাবে ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার ফারুকের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে মোট আটটি মামলা রয়েছে।