ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতেছে ইউনাইটেড। এক ড্র ও এক হারের পর লিগে জয় পেল রালফ রাংনিকের দল।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে সবশেষ ১৩ ম্যাচে এটা তাদের কেবল চতুর্থ জয়।
এক মাসের একটু বেশি সময়ের ব্যবধানে দুই হ্যাটট্রিক করলেন রোনালদো, নিজের সবশেষ তিন লিগ ম্যাচে দ্বিতীয়। ইউনাইটেডের এর আগের শেষ জয়টাও এসেছিল রোনালদোর কাঁধে চেপে। গত ১২ মার্চ টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষেও ঘরের মাঠের হোম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি, ওই ম্যাচও দল জিতেছিল ৩-২ গোলে।
কদিন ধরেই সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে আছে ইউনাইটেড। অনুশীলনের সময় দলটির মালিক গ্লেজার পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন রেড ডেভিলস সমর্থকরা। নরিচের বিপক্ষে ম্যাচে রোনালদোর প্রথম গোলের সময়ও মাঠের বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন কয়েক হাজার সমর্থক।

ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলা ইউনাইটেড প্রথম ১৬ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় পাঁচটি, যার তিনটি ছিল লক্ষ্যে।
গোলের দেখাও তারা এর মধ্যেই পেয়ে যায়। সপ্তম মিনিটে এন্থনি এলেঙ্গার পাস ধরে গোলমুখ থেকে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেন রোনালদো।
সপ্তদশ মিনিটে দিয়োগো দালোতোর শট রক্ষণে প্রতিহত হয়, চার মিনিট পর জর্ডান স্যানচোর শটও হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৩১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনালদো। আলেক্স তেলেসের কর্নারে অনেকটা লাফিয়ে হেডে জাল খুঁজে নেন এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
প্রথম ৩১ রাউন্ডে মাত্র পাঁচটি জয় পাওয়া নরিচ দুটি গোল খেলেও খেই হারায়নি। বরং শুরু থেকেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলছিল তারা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেয়ে যায় ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষও।
বিরতির আগের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে তেমু পুক্কির দূরের পোস্টে বাড়ানো ক্রসে হেডে ব্যবধান কমান কিয়েরান ডাওয়েল।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর খানিক বাদেই ইউনাইটেডের এগিয়ে থাকার স্বস্তি উবে যায়। ৫২তম মিনিটের এই গোলেও নাম জড়িয়ে ওই দুজনই। এবার ডাওয়েলের পাস ধরে বক্সের ডান দিক থেকে ডান পায়ের শটে সমতা ফেরান পুক্কি।

দলকে আবারও এগিয়ে নিতে ৬১তম মিনিটে দারুণ হেড করেন রোনালদো; কিন্তু সেটা ফিরিয়ে দেন নরিচের গোলরক্ষক। তবে ৭৬তম মিনিটে আর পারেননি তিনি।
ডি-বক্সের অনেকখানি বাইরে এলেঙ্গা ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় ইউনাইটেড। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে বুলেট গতির শট নেন রোনালদো। রক্ষণ দেয়াল এড়িয়ে লক্ষ্যে থাকা বলে ঝাঁপিয়ে হাত লাগান গোলরক্ষক; কিন্তু রুখতে পারেননি। বল পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়।
পূর্ণ হয় রোনালদোর ক্লাব হ্যাটট্রিকের অর্ধশতক। ইউনাইটেড এগিয়ে যায় জয়ের দিকে। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে রোনালদোর হ্যাটট্রিক হলো ৬০টি। ক্যারিয়ার গোল সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮১০টি।
এবারের লিগে রোনালদোর গোল হলো ১৫টি। তালিকায় উপরে আছেন কেবল মোহামেদ সালাহ (২০) ও সন হিউং-মিন (১৭)। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকার মোট গোল হলো ৯৯টি।
৮২তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ব্রুনো ফের্নান্তেস। তার শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক টিম ক্রুল।
চলতি মৌসুমে কোনো শিরোপা জয়ের আশা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে ইউনাইটেডের। নাটকীয় এই জয়ে ক্ষুব্ধ সমর্থকদের কিছুটা শান্ত করার পাশাপাশি আগামী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে ভালোমতো রইলো তারা।

শেষ চারের লড়াইয়ে থাকা টটেনহ্যাম ও আর্সেনাল হেরেছে তাদের নিজ নিজ ম্যাচে। টটেনহ্যামকে তাদের মাঠে ১-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিওন। আর সাউথ্যাম্পটনের মাঠে একই ব্যবধানে হেরেছে আর্সেনাল।
তাদের পরাজয় আর নিজেদের জয়ে লিগ টেবিলে এগোনোর পাশাপাশি শেষ চারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে ইউনাইটেডের। ৩২ ম্যাচে ১৫ জয় ও ৯ ড্রয়ে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে রালফ রাংনিকের দল। এক ম্যাচ কম খেলা আর্সেনাল ৫১ পয়েন্ট নিয়ে আছে ষষ্ঠ স্থানে।
ইউনাইটেডের সমান ৩২ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে টটেনহ্যাম। তাদের ওপরে থাকা চেলসির ৩০ ম্যাচে পয়েন্ট ৬২।
৩১ ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে লিভারপুল।