গ্রেপ্তার মো. সুমন (৩৫) ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার বাদুরখিল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ফটিকছড়ির চা বাগান এলাকায় মোটর সাইকেলে লোকজন আনা-নেওয়ার কাজ করতেন।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকা থেকে শনিবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান, র্যাব-৭ এর হাটহাজারি ক্যাম্প কমাণ্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, যৌতুকের টাকার জন্য গতবছর ৩১ অক্টোবর সুমন তার স্ত্রী মনিকে নিয়ে শ্বশুরের কর্মস্থলে যান। কিন্তু টাকা না পেয়ে ফেরার পথে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করেন।
“হত্যাকাণ্ডের পর ফটিকছড়ি থেকে পালিয়ে এসে ইটভাটায় জোগালির কাজ নিয়েছিলেন,” বলেন তিনি।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “দাঁতমারায় শ্বশুড়ের কর্মস্থল থেকে সুমন তার বন্ধু টিপুর মোটর সাইকেলে করে মনিকে নিয়ে চলে আসেন।
“ভূজপুর কালিগঞ্জ এলাকায় আসার পর চড় মেরে স্ত্রীকে মোটর সাইকেল থেকে নিচে ফেলে দেন। মাটিতে ফেলে দিয়ে ইট দিয়ে মাথায় এলোপাথারি আঘাত করেন।
“এক পর্যায়ে তার বন্ধু টিপুও মনির হাত চেপে ধরেন। এসময় সুমন তার স্ত্রীর চোখে আঙ্গুলে ঢুকিয়ে দিয়ে বাম চোখ নষ্ট করে দেয়। পরে মোটর সাইকেলের গরম সাইলেন্সার পাইপের সঙ্গে বুক চেপে ধরে পুড়ে ফেলেন।”
র্যাব-৭ অধিনায়ক ইউসুফ বলেন, “সুমনের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে সে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত। একজন স্বাভাবিক মানুষ আট মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে এভাবে মারধর করতে পারে না।”
স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে ভেবে সুমন ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল বলেও জানান এ র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সুমন তার স্ত্রীকে প্রথমে নাজিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু মনির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
“সেখানে মনিকে ভর্তি করে সুমন পালিয়ে যায়,” – বলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।
প্রায় ২৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৫ নভেম্বর মনি মারা যান।
এ ঘটনায় মনির ভাই মো. আব্বাস বাদী হয়ে ভূজপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় সুমনের সহযোগী টিপুকে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়। সুমন এতদিন পালিয়ে ছিলেন।
সুমন এর আগে দুটি বিয়ে করেন জানিয়ে র্যাব-৭ এর হাটহাজারি ক্যাম্প কমাণ্ডার মাহফুজুর বলেন, “আগের বিয়ের কথা গোপন করে মনিকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য মনিকে শারিরীক নির্যাতন শুরু করেন।
“বাধ্য হয়ে মনি তার বাবার কাছ থেকে দুই দফায় ৫০ ও ৬০ হাজার করে টাকা এনে দেয়। কিন্তু আরও টাকা এনে দেওয়ার জন্য সে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন অব্যাহত রাখে।”
তিনি জানান, সুমন আগে ফটিকছড়িতে চা বাগান এলাকায় মোটর সাইকেলে লোকজন আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। সেই সূত্রেই চা শ্রমিক মনি আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।